বুড়িগঙ্গা নদীর কেরানীগঞ্জ প্রান্তে ২০১৯ সালের ১৬ জুন মিতালী-৭ লঞ্চের কেবিনে খুন হয় লিলুফা বেগম (৫৭)। এ ঘটনায় নিহত নিলুফার ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এক মাস তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই মামলার তদন্তভার নেয় ঢাকার পিবিআই।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্রুনাই-প্রবাসী আসামি মো. দেলোয়ার মিজিকে (৪৪) দীর্ঘ চার বছর তিন মাস পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই, ঢাকা।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার
তিনি বলেন, নিহত লিলুফার স্বামী ২০১৫ সালে মারা যান। বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন। ২০১২ সালে তার বাড়িতে কাঠমিস্ত্রির কাজে যান দেলোয়ার। তখন পরিচয় হয় দুজনের। পরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৭ সালে দেলোয়ার ব্রুনাই চলে গেলে ভিডিও কলে তাদের কথাবার্তা চলতো।
২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল দুই মাসের ছুটিতে দেলোয়ার দেশে আসেন। পরে তিনি নিলুফার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। লিলুফা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি লিলুফাকে বিয়ে করবেন বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলে, লিলুফা তার বাড়িতে গিয়ে উঠবেন বলে হুমকি দেন। তখন দেলোয়ার মিজির বড় মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হয়। লিলুফা হুমকি দেন সেখানে গিয়ে তাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দিবেন। তখন দেলোয়ার তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন এবং বিদেশ যাওয়ার আগেই তাকে বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
নিহত লিলুফা আসামির চেয়ে ১৩ বছরের বড় হওয়ায় দেলোয়ার এই বিয়েতে রাজী ছিলেন না বলে জানান। মানসম্মানের কথা চিন্তা করে দেলোয়ার লিলুফাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৯ সালের ১৬ জুন লিলুফাকে বিয়ের কথা বলে দুজনে ঢাকায় রওনা দেন। দেলোয়ার মিতালী-৭ লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন বুকিং করেন এবং লঞ্চের রেজিস্টারে তার প্রতিবেশী মুদিদোকানি জাহাঙ্গীরের নাম ও লিলুফার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেন।
চাঁদপুর থেকে মিতালী-৭ লঞ্চ ছাড়ার পর রাত ১২টার দিকে লিলুফাকে ধর্ষণ করেন। রাত দেড়টার দিকে বিয়ের কথা নিয়ে দুজনের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দেলোয়ার লিলুফার গলা চেপে ধরেন। পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে দেলোয়ার লঞ্চ থেকে নেমে গাবতলীতে তার আত্মীয়ের বাসায় চলে যান।
আসামি আরও জানান, ঘটনার ৯ দিন পর ২০১৯ সালের ২৬ জুন তিনি লিলুফার মোবাইল ফোন দুটি নিয়ে ব্রুনাই চলে যান।
তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান নিহত লিলুফার প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তবে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন মর্মে প্রমাণ হওয়ায় অন্যভাবে তদন্ত করলে, লিলুফার সঙ্গে একই গ্রামের ব্রুনাইপ্রবাসী দেলোয়ার মিজির পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। তদন্ত চলতে থাকে।
এসআই খবর পান দেলোয়ার মিজি ২০১৯ সালের ২৬ জুন ব্রুনাই যান। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে অপেক্ষার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর দেলোয়ার দেশে ফিরলে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পিবিআই প্রধান আরও জানান, তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।