বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ১৮ জুন ২০২৫
ঘূর্ণিঝড়ের নাম যেভাবে ‘হামুন’ হলো
বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩, ৬:১৫ PM
খুব শিগগিরই ঘূর্ণিঝড় হামুন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আঘাত হানবে। যার প্রভাব দেশের আবহাওয়ায়ও দেখা যাচ্ছে। তাই শরতের এই বেলায় দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা মিলছে গুঁড়ি গুঁড়ি বা ঝমঝম বৃষ্টির। উপকূলবর্তী এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

হামুনকে ডেকেছে নিম্নচাপ। ২১ অক্টোবর ২০২৩-এ বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম-মধ্যভাগে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। সেটাই গভীর নিম্নচাপে ঘনীভূত হয়ে গত সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়। যা আজ রাত ১০টার দিকে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যেতে পারে।
হামুন

হামুন

প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের একটি নাম থাকে। এবারের নামটি ‘হামুন’। নামটি দিয়েছে ইরান। ইরানি এই নামটির অর্থ ‘মরুভূমিতে প্রাকৃতিক হ্রদ’ বা বিশাল জলাশয়।

এই ঘূর্ণিঝড়ের পর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘মিধিলি’, এটি মালদ্বীপের দেওয়া।
 
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের আদ্যোপান্ত

শুরুটা ১৯৫৩ সালে হয়। আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর মায়ামির জাতীয় হারিকেন সেন্টার আটলান্টিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য প্রস্তাব দেয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের একটি ইউনিট ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়।
ট্রপিক্যাল সাইক্লোন

ট্রপিক্যাল সাইক্লোন

ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিক্যাল ওয়েদার অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ২০০০ সালে এর সদস্য দেশগুলোর পরামর্শ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নাম প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে— এ কাজে তারা  বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, ওমান, পাকিস্তানের মতো আরো ১২টি দেশকে সঙ্গে নেয়।

শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্যানেলের অংশ। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়—তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলো নামকরণ করে। পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নামকরণ করে থাকে।

নামকরণের এই বিষয়টা নিয়ন্ত্রণিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডাব্লিওএমও) মাধ্যমে। ২০০৪ সালে ৮টি দেশ ৮টি করে মোট ৮৪টি নাম দেয়। সেখানে প্রথম নামটি ছিল বাংলাদেশের (অনিল)। নামের ক্রম আসে দেশের ক্রম অনুযায়ী। অর্থাৎ দেশের নামের ইংরেজি বর্ণানুক্রমে একটি করে দেশের নামে নির্ধারিত হয় আগত ঘূর্ণিঝড়ের নাম।

২০২০ সালে মোট ১৩টি দেশ ১৩টি করে মোট ১৬৯টি নাম দেয়। ১৩টি দেশ হলো- বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, আরব-আমিরাত এবং ইয়েমেন। ডাব্লিওএমও-র ভারতীয় উপমহাদেশের এই সদস্য দেশগুলোই নাম দেয়।
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ঝড়ের নাম দেওয়ার অনেকগুলো কারণের মাঝে অন্যতম, এটা ঝড়ের অঞ্চলে বসবাস করেন যাঁরা তাঁদের সতর্ক করে দিতে সহজ হয়। তাছাড়া ঝড়ের নাম দেওয়া হলে, কোন ঝড়ে কেমন ক্ষতি হয়েছে বা কোনো গবেষণার প্রয়োজনে তথ্য ঘাঁটতে সুবিধে হবে।

প্রথম বিংশ সতকের মাঝের দিকে নামকরণে মেয়েদের নাম বেশি ব্যবহৃত হতো। আবহাওয়াবিদদের যুক্তি ছিল, মেয়েদের নামগুলো মানুষ সহজে মনে রাখতে পারবেন। তাইতো নার্গিস, রেশমি, রিটা, বিজলি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, লুবান, তিতলি, নিলুফার, ক্যাটরিনা-সহ অনেকগুলো ভয়ংকর ঝড়ের নাম অমর হয়ে আছে। তবে পরবর্তীতে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা কর্তৃক শর্ত দেওয়া হয় যেন, নামগুলো লিঙ্গ নিরপেক্ষ হয়। 

নামকরণের শর্ত
• কোনো পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
• ঘূর্ণিঝড়ের নাম ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক আদর্শে আঘাত হানতে পারে—এমন নাম দেওয়া যাবে না।
• সংস্কৃতি এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ নাম হতে হবে।
• বিশ্বের কোনো জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগে যেন আঘাত না করে।
• নামের মধ্যে যেন কোনো নিষ্ঠুরতা, রুক্ষভাষা বা নির্মমতা প্রকাশিত না হয়।
• সহজ উচ্চারণবিশিষ্ট হতে হবে।
• সর্বোচ্চ আটটি বর্ণ থাকবে।
• নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা দিতে হবে। 
• আবহাওয়া সংক্রান্ত বৈঠকে আলোচনার পর নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।

বাবু/এমএ
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত