২৩ অক্টোবর রাতে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে মেয়েটি। দিনের আলো ফোটার পরই (সকাল ৬টায়) নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধনটিকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়েছিলেন মা। জন্মের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর পৃথিবীর এমন নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া নবজাতক শিশুর ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির হন সিএমপি বন্দর থানার এএসআই মিরাজ উদ্দিন। অবশেষে সেই মায়ের হদিস মিললেও মেলেনি বাবার পরিচয়। পরে আদালতের মাধ্যমে শিশুটি গ্রহণ করেন আরেক নিঃসন্তান মা।
২৩ অক্টোবর সকাল সাতটায় নগরীর বন্দর থানাধীন বন্দর অফিসার্স কলোনি আবাসিক গেটের বিপরীতে রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে বন্দর থানার এএসআই মিরাজ উদ্দিন নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর পুলিশের তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনার পর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চিহ্নিত করা হয় কারা শিশুটিকে ফেলে গেছে৷ পরে নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে শিশুটির আটক করা হয় শিশুটির মা ও মামাকে । সদ্য সন্তান জন্ম দেয়ায় সেই মাও অসুস্থ থাকায় তাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় সিনহা বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, “শিশুটি উদ্ধারের পর আমরা প্রথমেই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি৷ এরপর আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি নবজাতকটিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নিয়ে এসে ফুটপাতের ওপর ফেলে রাখা হয়েছিলো। এক পর্যায়ে আমরা ইপিজেড এলাকা থেকে শিশুটির মা ও মামাকে আটক করতে সক্ষম হই৷ জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে মূলত ১৯ বছর বয়সী এই কুমারী মায়ের অপ্রত্যাশিত শিশু হওয়ায় সামাজিক লাজলজ্জার ভয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরই নবজাতকের মা ও মামা তাকে রাস্তার পাশে ফেলে আসে।”
ওসি বন্দর আরো জানান, শিশুটির মা একজন গার্মেন্টস কর্মী বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে শিশুটির বাবার পরিচয় জানার চেষ্টা করলেও মা বিষয়টি প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে বুঝা যাচ্ছে প্রেমের সম্পর্ক থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন মেয়েটি। তবে মেয়েটির ভাষ্য তিনি যে গর্ভবতী হয়েছেন সেটি নাকি তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়েই নিজ ঘরেই রাতে শিশুটিকে প্রসব করেন। এরপর দ্রুত মেয়েটি তার ভাইয়ের সহায়তায় শিশুটিকে ফুটপাতে ফেলে দেন।
উদ্ধারকৃত শিশু ও আটক মা ও মামাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। একই আদালতে এক নিঃসন্তান মা শিশুটিকে নিজের কাছে রাখার আবেদন জানালে গর্ভধারিণী মা তাতে সম্মতি জানান। পরে আদালত শিশুটিকে সেই নিঃসন্তান মায়ের জিম্মায় প্রদান করেন এবং শিশুটির মা ও মামাকে কারাগারে প্রেরণ করেন বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
আইনজীবীদের মতে, এই ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩১৭ ধারায় দন্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শান্তি ৭ বছরের কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারর।