শেরে বাংলা কে ছিলেন, তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেছেন, বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব নির্ভর করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ওপর। ফজলুল হক এই ঐক্যের প্রতীক। ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙালি। সেই সঙ্গে ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমান
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব বাংলার মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক আমাদের কাছে চিরস্মরণীয়।
শেরে বাংলা কে ছিলেন, তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেছেন, বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব নির্ভর করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ওপর। ফজলুল হক এই ঐক্যের প্রতীক। ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙালি। সেই সঙ্গে ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমান।
বাংলার মুসলমানদের ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণে ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর জন্ম নিয়েছিলেন ইতিহাসের ক্ষণজন্মা পুরুষ আবুল কাশেম ফজলুল হক। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি বাংলার অনগ্রসর মুসলিম সমাজের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে স্থাপন করেছিলেন অনেক স্কুল-কলেজ। তিনিই বিভিন্ন সরকারি স্কুল-কলেজ, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বাঙালি মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনিই প্রাথমিক ও অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অনন্য অবদান ছিল। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন ছিল প্রজাদের উৎপীড়ন ও নিপীড়নের হাতিয়ারবিশেষ। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক ১৯৩৭ সালে এই আইনের আমূল সংশোধন করেন। আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এতদিন জমিতে প্রজার যে স্বত্ব অস্বীকৃত হয়ে আসছিল, তিনি তার স্বীকৃতি দিলেন।
বাংলার কৃষক সাধারণকে মহাজনদের নাগপাশ থেকে উদ্ধারে তিনি সারা বাংলায় গঠন করেছিলেন প্রায় ১১ হাজার ঋণ সালিশি বোর্ড। ফলে বাংলার কোটি কোটি ঋণগ্রস্ত চাষি ফেরত পেলেন তাদের জমাজমি। এমনকি তাঁর রচিত আইনের সাহায্যে ঋণের দায়ে ৪০ বছর আগে যাদের ভিটেমাটি হস্তান্তর হয়েছিল, তারা তাও ফিরে পেলেন। তিনিই প্রথম উচ্চারণ করেন– ‘লাঙল যার জমি তার’। তাই বঙ্গীয় দোকান কর্মচারী আইন পাসের মাধ্যমে তিনি তাদের দিয়েছিলেন ন্যায্য অধিকার। তিনি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তাদের উন্নত চাকরির শর্ত ও ছুটির অধিকারের।
১৯১৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে একমাত্র সভাপতির পদটি ছাড়া সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সব গুরুত্বপূর্ণ পদই তিনি কোনো না কোনো সময় অলঙ্কৃত করেছেন। ১৯১৮ সালে তিনি যখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক, তখন পণ্ডিত মতিলাল নেহরু ছিলেন কংগ্রেসের জয়েন্ট সেক্রেটারি। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকই অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাজনৈতিক গৌরব অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাংলা ও বাঙালির জন্য স্বাধীনতা অর্জন ছিল শেরে বাংলার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রধান লক্ষ্য। অবিভক্ত বাংলায় তিনি ‘দৈনিক নবযুগ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৯২০ সালে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদকে তিনি এই জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক নিযুক্ত করেন। পত্রিকাটির পাতায় পাতায় বাংলার দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের সমস্যাপীড়িত জীবনের চিত্র এবং তাদের আশা-আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন ঘটত।
১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের জাতীয় জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এই মহান নেতার স্বপ্ন ও সাধনা আজও আমাদের জাতীয় মুক্তির পথ দেখাতে পারে।
লেখক : শেরে বাংলার নাতি ও আওয়ামী লীগ নেতা