মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গজিয়ে ওঠা স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজার অপারেশন করাতে এসে লিপি আক্তার নামের এক প্রসুতি মারা গেছে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, অপারেশনের পর রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হসপিটালে রেফার্ড করে স্বপ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। পরে মুন্নু মেডিকেলে পৌছালে কর্তব্য চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত লিপি আক্তার জেলার ঘিওর উপজেলার শ্রীবাড়ি এলাকার মোঃ উজ্জল হোসেনের স্ত্রী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লিপি আক্তারের অপারেশন করেছেন ডাক্তার খাইরুল হাসান এবং অ্যানাস্থেসিয়া চিকিৎসক ছিলেন ডাঃ মুজাহিদুর রহমান। এসময় উপস্থিত অপারশেন থিয়েটারে তাদের সহযোগিতা করে হাসপাতালের একজন নার্স এবং মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট কোর্সে অধ্যয়নরত নিক্কন নামের এক যুবক। ।
নিক্কনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট কোর্সের তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছি। অপারেশেনরে সময় আমিও ছিলাম। অপারেশনের পর যখন ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছিল না তথন খাইরুল স্যারকে খবর দেই। স্যার তিনবার এসে চিকিৎসা দেন। এরপর রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাকে মুন্নু মেডিকেলে রেফার্ড করেন খাইরুল স্যার।
লিপি আক্তারের ভাই মো: রাজিব মিয়া জানান, অপারেশনের পর থেকেই আমার বোনের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আমার বোনের ফাইলপত্র চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেগুলো দেয়নি। আমি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা কোন সদুত্তর দেয়নি।
লিপি আক্তারের চাচাতো ভাই শরিফুল ইসলাম জানান, সিজার অপারেশন করার জন্য তার বোন লিপি আক্তারকে সকাল ১০টার দিকে স্বপ্ন হাসপাতাল এণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এরপর দেড়টার দিকে ডাক্তার খাইরুল হাসানের তত্বাবধানে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে ডাক্তাররা বার বার অপারেশন থিয়েটারে যাওয়া আসা করতে থাকে। এরপর রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হয়ে গেছে। ভালো কোন হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত মুন্নু মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে আমরা অ্যাম্বুলেন্স যোগে মুন্নু মেডিকেলে নিয়ে যেতে চাই। কিন্ত মুন্নু মেডিকেলে পৌছানোর আগেই আমার বোন মারা যায়।
এদিকে, লিপি আক্তারের মৃত্যুর পর থেকেই ডাক্তার খাইরুল হাসান আত্মগোপনে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ডাক্তার খাইরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুরাদ খান বলেন, আমাদের ম্যানেজমেন্ট এর কোন সমস্যা নেই। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার খাইরুল হাসান ও অ্যানাস্থেসিয়া ডাক্তার তিনবার করে এসে রোগী দেখে গেছে। রোগীর আগেও তিনটা মেয়ে আছে, আজকে আবার মেয়ে হয়েছে। এজন্য তার পরিবারের লোকজন নানা ধরনের কথা বলছে। এসব কথা শুনে রোগীর অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়।
মানিকগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার জানান, জরুরী হেল্পলাইন ৯৯৯-এ কল পেয়ে স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে লিপি আক্তার নামের এক গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরেছি। এরপর তাৎক্ষণিক সেখানে আমাদের পুলিশ পাঠিয়েছি। প্রসূতি লিপি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।