মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫ ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫
বিভ্রান্তের হরতাল-অবরোধ
আরিফ আনজুম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩, ৩:৫২ PM
স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকেই আমাদের কিছু শত্রু এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। সেই পাকিস্তান আমলে ছিল উর্দু ভাষার হানাদার কুলাঙ্কার আর স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুগে যুগে এসে বাঙালির সামনে পূর্বের ন্যায় অন্য বৈশিষ্ট্য আঙ্গিক সম্পূর্ণ কিছু বিরোধিতার সংঘবদ্ধ দল। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।

আপামর মুক্তিকামী মানুষের বিপক্ষে গিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে হত্যা, নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, নারী ধর্ষণ সর্বোপরি বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো অমানবিক নোংরা সব নৃশংস অপরাধ করেছিল এই নরপশুরা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশবিরোধী নানা রকম কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দালাল আইন বাতিল করা হয়। জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের রাজনীতি করার সুযোগে এবং ক্ষমতার অংশীদার হয়ে থাকার কারণে তারা শক্তি সঞ্চয় করে। তারা সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সহজ-সরল জাতিকে বিভ্রান্ত পথে পতিত করার পাঁয়তারায় মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। তারা ভেবেছিল এভাবেই তারা পার পেয়ে যাবে। দেরিতে হলেও যখন মানবতাবিরোধী এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং সাজা হয়েছে তখন তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিবর্তন করে অন্য ধারায় চলতে শুরু করেন। এতে তারা দেশবিরোধী কাজ করেছে অনেকÑ যা তারা করেছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়। নিজামী, মীর কাশেম ও কামারুজ্জামানের রায়ের পর ২০১৪ সালে যেমন লাগাতর সপ্তাহব্যাপী হরতালের ডাক দিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, বর্তমান সময়ে ঐ একই গতিতে পরিগণিত হওয়ার জন্য নানা পায়তারায় তারা পূর্বের ন্যায় লাগাতর হরতাল অবরোধ নামক জঘন্য কর্মকাণ্ডের ডাক দিচ্ছেন প্রতি সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে। 

সর্বস্তরের মানুষ ২০১৪ সালে যেখানে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তখন জামায়াতে ইসলামী এই রায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক হরতাল ডেকেছে। ঐ সময়ের হরতাল শুধু অনৈতিক নয়, এর মাধ্যমে দেশবিরোধী এই দলটি দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করার সাহস দেখিয়েছেন। তাদের ঐ হরতালে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এখনো আবার সেই পূর্বের জায়গায় ফিরে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে এই নিষিদ্ধ নিবন্ধনধারী দলটি।

সর্বজনমতে যে বিদ্রƒপ শুধু শুরু করেছেন যে তা নয়, তারা দেশের তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সকল জাতিসত্তাকে এক অন্ধকার জগতে নিমজ্জিত করার অভিপ্রায়ে অটুট। কেননা নভেম্বরে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষামন্ত্রণায়ল থেকে। স্কুল-কলেজের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েও উদ্বেগে পড়েছে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী। বার বার পরিবর্তিত হয়েছে শিক্ষার্থীদর পরীক্ষার ভাবনার জগত। এখনও পরীক্ষা শুরু হয়নি। হরতাল-অবরোধ কেউ মানছেও না। সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই কর্মব্যস্ততায় দিন অতিবাহিত করছে। তারপরও পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে জামায়াত-বিএনপির হরতাল মানেই নাশকতা, অগ্নিসংযোগ আর বোমাবাজি। তাই জনমনে এই ভীতিকর আশঙ্কার কারণে ক্ষতি হচ্ছে সারাদেশের অর্থনীতির। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছেÑ এই হরতাল করা হচ্ছে দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে অবমাননা করার শামিল। জামায়াত এসব করে কিছুই অর্জন করতে পারবে না। কেননা দেশের মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে এই বিপক্ষ দলীয় দলগুলো দেশের উন্নতি সাধনে বাধাগ্রস্ত হবে। এই বাধাগ্রস্তে আটকে থাকাটা কোনো দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয় এবং জাতি মানতে রাজি নন। তাই দেশের সর্বমহল থেকে বর্তমান শাসনকৃত দলটি বহালে একটা নীতিবাচক ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। কারণ এখন পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলনে কোনো বড় ধরনের কোনো চমক  দেখাতে পারেনি। জামায়াত-শিবির হরতাল ডাকার আগে বিএনপি হরতালের ডাক দেন অথচ তারা মাঠে না নেমে নামিয়ে দিচ্ছে জামায়াত-শিবিরকে। এতে কওে বোঝাই যাচ্ছেÑ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করা বিএনপির কতোটা সময় সাপেক্ষ!

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত