টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গাংগাইর আহাম্মদ আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিবদমান দুটি গ্রুপের বিরোধের জেরে সভাপতির লোকজন শিক্ষকদেরকে মারপিট করেছেন। প্রতিবাদে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ শেষে মহাসড়ক ব্যারিকেড বসিয়ে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক অচল করে রাখায় দুই ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মারপিটে দুই পক্ষের অন্তত দশ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০০ শয্যার মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন শিক্ষক ও সভাপতি পক্ষের উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী জানান, বিগত ৪ মার্চ আব্দুল হামিদ বাচ্চু প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসর নেয়ার পর ওই পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিচালনা কমিটিতে জমিদাতা সদস্য এবং শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ উঠে বর্তমান সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী বিএসসি তার পছন্দের জনৈক প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগের চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে শিক্ষকগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত দেন। এ খবরে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সভাপতি কোরবান বিএসসি জমিদাতা সদস্য ও ভাতিজা মমিনুল ইসলাম মুকুলসহ উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিল, জিয়াউল হক রুবেল, ইকবালসহ ২০/২৫ জনের একটি দল নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা ক্ষুব্দ হয়ে ইংরেজি শিক্ষ আব্দুর রাজ্জাক , কম্পিউটার শিক্ষক আলহাজ আতিকুর রহমান, গণিত শিক্ষক বুলবুল আহমেদ ও আনোয়ার হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, বিল্লালকে পেটাতে শুরু করেন।
এদিকে শিক্ষক পিটিানোর খবর শুনে পরীক্ষার কক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে পালানোর সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। অন্যরা পালিয়ে গেলেও সভাপতি কোরবান বিএসসি ছাত্রদের কাছে আটকা পড়েন। তাকে বিকেল পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয়। তবে সভাপতি কোরবান বিএসসি বিদ্যালয়ের এ অবস্থা থেকে বের হয়ে যাওয়া সভাপতি হিসেবে সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,শামীমা ইয়াসমীন, ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাদের উপস্থিতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষুব্দে ফেটে পড়েন। দফায় দফায় মিছিল করে সভাপতির পদত্যাগ দাবি করেন। পরে রাস্তায় ব্যারিকেড বাসান।
তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় কোরবান বিএসসি বিক্ষোভের মুখে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সন্ধ্যার আগে বিক্ষাভকারীরা অবশেষে অবরোধ তুলে নেন।
মধুপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে সভাপতি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে। ৪ শিক্ষক হাসপাতালে ভর্তি। বিদ্যালয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষার বৃহস্পতিবারের বিকেলের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। এখন সব পক্ষ নিয়ে বসার প্রক্রিয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আইনী প্রক্রিয়া নেয়া হবে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমীন জানান, শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্দদের দাবির প্রেক্ষিতে সভাপতি সেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের পর বিক্ষুব্দরা রাস্তার অবরোধ তুলে নেয়। এখন আক্রান্তরা আইনী পদক্ষেপ নিতে পারেন। সেটা তাদের ব্যাপার। বর্তমানে আহত শিক্ষকসহ অন্যান্যদের চিকিৎসা চলছে।