কক্সবাজার পৌর এলাকার উন্নয়ন কাজে যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজার পৌরসভা। জেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে তাহলে নিতে হবে পৌরসভার মতামত। পৌর এলাকার অভ্যন্তরে উন্নয়ন কাজে মতামত প্রদান প্রসঙ্গে এমন একটি অফিস চিঠি পাঠিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তবে এমন চিঠি পাওয়ার পরেই দুইটি প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে কক্সবাজার জেলা পরিষদ।
কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলার ৪টি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নে রাস্তা, ঘাটসহ উন্নয়ন করে যাচ্ছে জেলা পরিষদ। তবে নতুন করে কক্সবাজার পৌরসভার অফিশিয়াল চিঠিতে উন্নয়ন কাজে মতামত গ্রহণ করা এটা সমন্বয়হীনতা বলছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ। পৌরসভার অভ্যন্তরে উন্নয়ন কাজে আগে যেহেতু মতামত কিংবা অনুমতি নিতে হয়নি জেলা পরিষদ থেকে, সেক্ষেত্রে নতুন করে চিঠি চালাচালিতে কক্সবাজারের উন্নয়ন কাজে খুবই অন্তরায়ন বলছেন কক্সাবজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আনম হেলাল উদ্দিন।
চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই অফিস চিঠিতে উল্লেখ করেন, কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের ঘোনার পাড়াস্থ মরহুম মোস্তাক সড়ক এবং বিবেকানন্দ স্কুল সংলগ্ন সড়কের নির্মাণ কাজ জেলা পরিষদ, কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা সরেজমিনে প্রতীয়মান।
উল্লেখ্য যে, নাগরিক সেবার অংশ হিসেবে পৌর এলাকার অভ্যন্তরে পূর্ত ও অবকাঠামো উন্নয়ন, পানি ও পদ্মা নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ বাস্তবায়নে পৌরসভার নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। এক্ষেত্রে পৌরসভার মতামত ব্যতিরেখে পৌর এলাকার অভ্যন্তরে উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করা হলে পৌরসভার উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হয়।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো ওই চিঠির অনূলিপি দেয়া হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কক্সবাজার পৌরসভা, নির্বাহী প্রকৌশলী কক্সবাজার পৌরসভা বরাবর এই পত্রটি পাঠানো হয়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যদি কোন নির্দেশনা না থাকে তাহলে উন্নয়ন করতে সমস্যা কী? পৌর এলাকায় জেলা পরিষদ উন্নয়ন করতে পারবে কিনা সেটির বিষয়ে বিস্তারিত আমি জানি না।’
এদিকে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আনম হেলাল উদ্দিন বলছেন, কক্সবাজারকে উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাত ভরে দিয়েছেন। কক্সবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে যে চিঠিটা দেয়া হয়েছে ওইটা উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ হবে অবশ্যই। পৌরসভা-জেলা পরিষদ সম্বনয় না থাকলে কখনো উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীন সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল বলেন, ‘ জেলা পরিষদের সাথে পৌরসভার সমন্বয়হীতা, পৌরসভার সাথে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে জেলা প্রশাসনের সাথে সম্বনয় নেই, এই যে সমন্বয়হীনতা এটা আমাদের কক্সবাজারবাসীর জন্য একটা অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা যে সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এটার কারণ হচ্ছে সমন্বয়হীনতা। পর্যটন নগরীর বৃহত্তর সার্থে, মানুষের সুযোগ-সুবিধার সার্থে এই সমন্বয়টা বেশি জরুরী। এই ধরণের চিঠি চালাচালি আমাদের জন্য খুবই অন্তরায়ন।’
কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, অতিতে যদি উন্নয়ন করতে জেলা পরিষদ অনুমতি কিংবা মতামত গ্রহণ না করে, তাহলে নতুন করে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম জানান, জেলা পরিষদ-কক্সবাজার পৌরসভা কি কাজ করতে পারবে সুনির্দিষ্ট একটি নিতীমালা আছে। সেই নিতিমালা আলোকে যার যতোটুকু ক্ষমতা সেটা প্রয়োগ করা উচিত। জনসার্থে রশি টানাটানি না করে জেলা পরিষদ করুক আর কক্সবাজার পৌরসভা করুক সম্বিলিতভাবে উন্নয়নকে তরান্বিত করার জন্য প্রত্যশা থাকবে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চিঠি দেয়ার বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী মোঃ সরওয়ার সালাম জানান, পৌর এলাকার অভ্যন্তরে পূর্ত ও অবকাঠামো উন্নয়ন যেহেতু কক্সবাজার পৌরসভার সেক্ষেত্রে চিঠি দেয়া হয়েছিলো জেলা পরিষদকে।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী সরওয়ার সালার বলেন, বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী স্যারের সাথে কথা বলেছিলাম। যে, এই রকম একটি চিঠি যাবে। তবে চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্যে হলো সমন্বয় করে কাজ করা।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী হওয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবউল করিম জানান, পৌরসভার মেয়রের স্বাক্ষরিত এই পত্রটি পেয়েছিলেন তিনি।
জেলা পরিষদের সহকারী প্রকোশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, পৌরসভা মেয়র মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রটি পাওয়ার সাথে সাথে ঘোনার পাড়াস্থ মরহুম মোস্তাক সড়ক এবং বিবেকানন্দ স্কুল সংলগ্ন সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু ওই পত্রে দুই সড়কের কথা উল্লেখ আছে, সেই ক্ষেত্রে পৌরসভা কাজ করার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, ইতিপূর্বে কক্সবাজার জেলা পরিষদ থেকে কখনো পৌরসভার লিখিত কিংবা মুখিক মতামত জানতে হয়নি। জেলা পরিষদ অনেক বছর আগে থেকে কক্সবাজার পৌরসভা সহ জেলার ৪টি পৌরসভা ৭১টি ইউনিয়নে কাজ করে আসছে।