আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে নির্বাচনী প্রচারে মুখর হয়ে উঠেছে নেত্রকোনার পাঁচটি নির্বাচনী এলাকার রাজনীতির মাঠ। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যতটা সরব, বিএনপির প্রার্থীরা ততটা নয়। তবে দলগতভাবে এ জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলই শক্তিশালী। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কমিটি থাকলেও অবস্থান ততটা সুদৃঢ় নয়। জামায়াত পুরো কোণঠাসা। বাদবাকি দলগুলোর হাতেগোনা কয়েকটার অস্তিত্ব আছে, বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নেই। দ্বাদশ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাদের আসনগুলো ধরে রাখতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি চায় তাদের হারানো আসন পুনর্দখল করতে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে দু’দলই মরিয়া।
নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) :
সীমান্তবর্তী ও আদিবাসী অধ্যুষিত দুই উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-১ আসন। নবম সংসদে এ আসনের এমপি ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আনন্দমোহন কলেজের সাবেক ভিপি মোশতাক আহমেদ রুহী। দশম নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। তার বদলে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছবি বিশ্বাস। মনোনয়নবঞ্চিত রুহী এবং সাবেক এমপি জালাল উদ্দিন তালুকদারের পুত্র শাহ কুতুবউদ্দিন তালুকদার রুয়েল তখন স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও ওই তিন জনসহ মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মোট ১৪ প্রার্থী। ছবি বিশ্বাস সাবেক এমপি হিসেবে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহীও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। গত নির্বাচনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ কুতুবউদ্দিন তালুকদার রুয়েলের পক্ষেও গণসংযোগ করছেন তার কর্মীসমর্থকরা। তিনবারের সাবেক এমপি জালাল তালুকদারের পুত্র হিসেবে তিনি সুপরিচিত। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আদিবাসী নেতা উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেংও দলীয় মনোনয়ন পেতে চান। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য মানু মজুমদার। এছাড়া কলমাকান্দা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মো. ফখরুল ইসলাম ফিরোজ, আজমল হোসেন পাইলট ও মনোনয়নের জন্য তৎপর।
এদিকে গত নির্বাচনের সময় থেকে গণসংযোগ করে আসছেন সাবেক যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এরশাদুর রহমান মিন্টু ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য রোটারিয়ান আতাউর রহমান খান আখির।
আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট আফতাব উদ্দিন, ব্যারিস্টার মো. শাহ মোহসিন, জালাল উদ্দিন তালুকদারের কন্যা দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার।
নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে তার। তিনি ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক এমপি গোলাম রব্বানী। সাবেক এমপি ও হুইপ অ্যাডভোকেট আব্দুল করিম আব্বাছি এলডিপিতে যোগ দেন। এলডিপি জোটভুক্ত হলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা ডা. দিবালোক সিংহ।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) :
নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি ( সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী)। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তার বদলে দলের টিকেট পান সাবেক ফুটবল তারকা আরিফ খান জয়। প্রথমবার এমপি হয়েই তিনি যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী হন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন আরিফ খান জয়। অন্যদিকে বর্তমান এমপি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এমপিও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। দুবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলামও দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আশাবাদী। আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি লে. কর্নেল (অব) আবদুন নূর খান। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনিও গণসংযোগ এবং লবিং করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দুই যুগ্ম সম্পাদক নেত্রকোনা পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান এবং সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়ও মনোনয়ন আশা করছেন।
এ আসনের আরেক আলোচিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামছুর রহমান লিটন (ভিপি লিটন)। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালী, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ সারোয়ার মুর্শেদ আকন্দ জাস্টিস।
এদিকে বিএনপির প্রার্থী সংখ্যাও একাধিক। গত কয়েকটি নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খান একাই ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে এবার নিজ দলে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক আনোয়ারুল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই তৎপর তিনি। আশরাফ উদ্দিন খান এবং আনোয়ারুল হক, দু’জনই ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ড. আরিফা জেসমিন নাহীনও মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন সময় গণসংযোগ করেছেন। এছাড়া এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি।
জাসদ (ইনু) থেকে প্রার্থী হতে চান অধ্যাপক মুখলেছুর রহমান মুক্তাদির। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনয়ন পেতে চান জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আসমা সুলতানা আশরাফ। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ফকির আশরাফের সহধর্মিণী।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) :
নেত্রকোনা-৩ আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মঞ্জুর কাদের কোরাইশী। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বাদ পড়েন। তার বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শিল্পপতি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। এমপি হওয়ার পর তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে এবারও তিনি আশাবাদী। সাবেক এমপি মঞ্জুর কাদের কোরাইশীও তৎপর রয়েছেন। এ আসনের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান এমপি অসীম কুমার উকিল। আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক মতিন গত কয়েকটি নির্বাচন ধরে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের আরেক আলোচিত মুখ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্রকার অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান মানিক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এ কেন্দ্রীয় নেতাও গণসংযোগে নেমে মাঠ সরগরম করছেন। অন্য প্রার্থী কেন্দুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ও শিল্পপতি সামসুল কবীর খান। মনোনয়নের আশায় দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করায় তিনিও সুপরিচিত প্রার্থী। জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার ও নিয়মিত গণসংযোগ এবং লবিংয়ে ব্যস্ত। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আলমগীর হাসান, আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম (সাবেক এমপি আব্দুল খালেকের পুত্র), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সালমা আক্তার।
বিএনপি থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হিলালী এবারও মনোনয়নের জন্য তৎপর। এ আসনে বিএনপির আরেক জনপ্রিয় প্রার্থী হলেন কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির তিন তিনবারের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। এছাড়া দুবার ইউপি চেয়ারম্যান এবং একবার কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিনি। প্রার্থী হিসেবে তিনিও খুব পাকাপোক্ত অবস্থানে। বিএনপির আর যারা মনোনয়ন চাইবেন তারা দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ আলমগীর খসরু, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরামের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়নের চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া। তবে দলটির অবস্থান এখন আর ততটা সুদৃঢ় নেই এখানে। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হাসান।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) :
বিএনপির জুৎসই কোনো প্রার্থী না থাকায় হাওর-বাঁওর অধ্যুষিত নেত্রকোনা-৪ আসনের নির্বাচনী প্রচার অনেকটা নিষ্প্রাণ। অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকা। এক সময় আসনটির অধিপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মমিন। পরবর্তীতে সেটি বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। কিন্তু বিতর্কিত বাবর নবম সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের মনোনয়ন পাননি ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে বাবরের স্ত্রী এই আসন থেকে নির্বাচন করেন। অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনে তার দল অংশই নেয়নি। এ কারণে বাবরের রাজত্ব ভেঙে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আসনটি পুনরায় দখল করে নেন আব্দুল মমিনের স্ত্রী রেবেকা মমিন। নবম ও দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরপর তিন বার এমপি হন তিনি। নির্বাচনী এলাকায় কিছুটা কম এলেও পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে তার। আগামী নির্বাচনে ও তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। পাশাপাশি দলের আরও কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন চাচ্ছেন। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বর্তমান বাংলাদেশ বিমান পর্যষদ পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের নেতা শফী আহমেদ, সাবেক জেদ্দা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন (অব) মনজুর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শফী আহমেদ আসনটির পরিচিত মুখ। আব্দুল মমিনের মৃত্যুর পর থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। ২০০৬ সালে তাকে একবার মনোনয়ন দেওয়া হলেও ১/১১ এর প্রেক্ষাপটে সে নির্বাচন হয়নি। এরপর ২০০৮-এ পুনরায় মনোনয়ন পান। কিন্তু দাখিলের পর তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে মনোনয়ন দেয়া হয় রেবেকা মমিনকে। এ কারণে বার বার চেষ্টা করেও নৌকার কান্ডারী হতে পারেননি তিনি। তবে এবার দৃঢ় আশা নিয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। অপর প্রার্থী জেদ্দা মহানগর আওয়ামী লীগের বিদায়ী সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মমতাজ হোসেন চৌধুরীও গত নির্বাচন থেকে গণসংযোগ করে আসছেন। প্রবাসের চাকরি ছেড়ে সরাসরি মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাপ্টেন (অব) মনজুরও মনোনয়নের জন্য চেষ্টা-তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এর আগেও একাধিকবার মনোনয়ন চেয়েছেন তিনি। এদিকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বাড়িও এ আসনের অন্তর্গত খালিয়াজুরিতে।
এদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত এ আসনে নবম সংসদ নির্বাচন থেকেই প্রার্থী সঙ্কটে ভুগছে বিএনপি। নবম সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ আতাউল হক। কিন্তু জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তার। অন্যদিকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাবর। পরাজিত হলেও তিনি ভাল ভোট পান। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বাবরের প্রার্থী হওয়া অসম্ভব। তাই বাবরের বদলে তার স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন। এমন প্রচার আছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে। কিন্তু গত একাদশ নির্বাচনের আগে বাবরের স্ত্রী শ্রাবণীকে কখনও মাঠে নামতে দেখেননি ভোটাররা। তবে মনোনয়ন পেলে তিনি বাবরের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠবেন, এতে সন্দেহ নেই। এ আসন থেকে বিএনপির আরও যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তারা হলেন কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক জিএস অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা চৌধুরী। এই আসনে সিপিবি থেকে প্রার্থী হবেন কেন্দ্রীয় নেত্রী জলি তালুকদার।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) :
একটি মাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক। তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং শহীদ কর্নেল তাহের বীর উত্তমের ভাই। বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিবেচনায় এবারও দলীয় মনোনয়ন এবং জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। তবে বেলাল ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন আরও কয়েক প্রার্থী। তাদের মধ্যে এক হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। আরেক নতুন প্রার্থী হলেন লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার তুহিন আহমেদ খান। সাবেক ছাত্রনেতা আহমদ হোসেন এ আসনের পরিচিত মুখ। ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। এদিকে লন্ডন প্রবাসী তুহিন আহমেদ খান ও বেশ আগে থেকে গণসংযোগ করে আসছেন। অন্যদের মধ্যে বাকৃবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মিছবাহুজ্জামান চন্দনও মনোনয়ন চাইবেন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক এমপি ডা. মোহাম্মদ আলী। তার মৃত্যুর পর আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করে আসছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার। পাশাপাশি গণসংযোগ এবং দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন আরেক তরুণ প্রার্থী এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন ডা. মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী, আইনজীবী নেতা ড. আব্দুল জলিল এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শরীফ আহমেদ। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার আজাদ।
-বাবু/এ.এস