জামায়াত বিএনপি অধ্যুষিত অঞ্চলে দ্বায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই অঞ্চলের জামায়াত ও বিএনপি নেতারা সাহসী এসব কর্মকর্তাদের কখনো মামলা, কখনো স্পর্শকাতর অভিযোগ আনছেন। আর এসব অভিযোগ দেখে পুলিশের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা কর্মকর্তারা অভিযোগ আসা কর্মকর্তাদের কোনরূপ তদন্ত না করেই তাদের বরখাস্ত বা বদলি করছেন।
পরবর্তীকালে তদন্তে তারা অভিযোগ থেকে মুক্তও হচ্ছেন। কিন্তু তার আগেই বদলি বা বরখাস্ত করে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্নের শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে পুলিশের ভেতরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এক শ্রেণীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে সুকৌশলে এ কাজগুলো করছেন। এতে করে পুলিশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি ক্ষোভের সঞ্চারও হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে জামায়াত বিএনপিটর এই চক্র ততই মাথা চাঁড়া দিচ্ছে। মূলত আগামি নির্বাচনকে টার্গেট করেই চক্রান্তের অংশহিসেবে সাহসী এসব কর্মকর্তার নামে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগ করানো হচ্ছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কখনও কখনও ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। তবে শেষমেশ এসব অভিযোগের কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
বিএনপির ও জামায়াতের লোগো
এ পরিস্থিতিতে পুলিশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়ার আগেই কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরাসরি অ্যাকশনে যাচ্ছেন। অথচ পরবর্তীতে সেটি ভূয়া প্রমানিত হচ্ছে। জানা যায়, সম্প্রতি এমনই এক মামলায় ফেঁসেছেন মঠবাড়িয়ার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে তিনি সাতক্ষীরা জেলার একটি থানায় বদলি হন। তবে পিছু ছাড়েননি ওই নারী। তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে ওই নারী পুলিশের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ দেন। অভিযোগের জেরে ওই কর্মকর্তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় পুলিশ।
তবে তদন্তের কোনো প্রমাণ মেলেনি। একারণে মানহানি হয় এই পুলিশ কর্মকর্তার। এছাড়াও বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগও আনা হয় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী মোসা. সালমা বেগম (২৯) নামে ওই নারী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দাউদখালীর মৃত মো. রতনের মেয়ে। অনুসন্ধান বলছে, এই নারী পেশাদার প্রতারক ও ব্ল্যাকমেইলার। দেশে স্বামী রেখেও তিনি এক প্রবাসীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই প্রবাসী দেশে ফিরলে তিনি তাকে বিয়ের চাপ দেন। বিয়ের পরে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া শেষে তিনি এই স্বামীকে তালাক দিয়ে থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তের কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তার নামেও তিনি অভিযোগ করেন।
লন্ডন জামায়াতের এক নেতার চক্রান্তের অংশহিসেবে ওই নারীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি এলাকায় একই ধরণের মামলার তথ্য মিলেছে।
২০২২ সালে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। সেই ঘটনার তদন্ত করে এর প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে করা মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় মামলার বাদীকে কারাগারে পাঠান আদালত।
মামলায় অভিযোগ আনা হয় পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ আসামিরা তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুঘ দাবি করেন এবং ১৫ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। এছাড়া বাকি ১৫ লাখ টাকা দিতে আসামিকে চাপ প্রয়োগ করে। আরও অভিযোগ করা হয় নুরুল আবছারের শ্যালেকের মোবাইল ফোনে কল করে টাকা দাবি করেন পতেঙ্গা থানার এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা।
তবে আদালত বিষয়টি দুদককে অনুসন্ধান করতে দিলে দুদক অনুসন্ধান করে দেখেন মামলায় যার নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটি মিথ্যা। এছাড়া মামলা যাদের স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে তাদের সন্ধানও পাওয়া যায়নি। এছাড়া নুরুল আবছারের কাছ থেকে পুলিশের ঘুষ নেওয়া ও ঘুষ দাবির বিষয়টি সত্য নয়। তদন্তে সবকিছু মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপসহকারী পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মো. নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ২০০৪ এর ২৮ (গ) ধারায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০২০ সালের আরেকটি ঘটনায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মিথ্যা অভিযোগ এনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন পতেঙ্গা এলাকার নুরুল আবছার নামে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’। আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ তদন্ত করে। তদন্তে মাদক ব্যবসায়ী’ নুরুল আবছারের অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। পরে আদালত পুলিশের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খারিজ করে দেন। এবার মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করায় দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে বাদী নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
তবে অনেক সময়ই মিথ্যা অভিযোগের জেরে হয়রানি পোহাতে হচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তাদের। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চারও হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে। তারা বলছেন, সামনে কঠিন পরিস্থিতির সন্মুখিন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে একটি চক্র বেছে বেছে সাহসী কর্মকর্তাদের নামে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ পর্যায়ের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেও এমন ধরণের তৎপরতা দেখা গেছে। এখনও কোথাও কোথাও এমনটা দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে সচেতন থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কোনো অন্যায়ে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেলেই এখন নিয়মিত মামলা করা হয়। এ ছাড়া বিভাগীয় মামলাও হচ্ছে। আমরা বিষয়গুলো নজরে রাখি।