জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট বিজয়ী হয়ে এপর্যন্ত সংসদে পা রেখেছেন বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকা। তাদের নিয়েই বাংলাদেশ বুলেটিনের পাঠকদের জন্য আজকের এই আয়োজন-
" align=
আকবর হোসেন পাঠান ফারুক
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যাদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্য অন্যতম ছিলেন অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমার অভিষেকের পর বহু দর্শকনন্দিত সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন এ অভিনেতা।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং ‘আলোর মিছিল’ চলচ্চিত্র দুটিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন। এরপর ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত সুজন সখী ও লাঠিয়াল নামে দু'টি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে চলে আসেন ফারুক। সুজন সখীতে কবরী এবং লাঠিয়ালে ববিতার সঙ্গে জুটি বাঁধেন। আলোচিত এই দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে আরও অনেক সিনেমাতে ফারুককে দেখা গেছে।
সারেং বৌ
লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্র অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন তিনি। এর পরের বছর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় মাটির মায়া ও নয়নমনি। চলচ্চিত্র দু'টি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়। নয়নমনি সিনেমায় ববিতার সাথে তার রসায়ন মুগ্ধ করে সিনেপ্রেমীদের।
শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৭ সালে নির্মিত সারেং বৌ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ফারুক। ফারুক স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়।
" align=
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ফারুক ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালে ১৫ মে তিনি মারা যান।
" align=
সারাহ বেগম কবরী
বাংলা ছবির স্বর্ণালি যুগ বলতে যে সময়কে বোঝানো হয়, সেই সময়ের সফলতম নায়িকা সারাহ বেগম কবরী। ভক্তরা যাকে ভালোবেসে ‘মিষ্টি মেয়ে’ ডাকতেন। 'রংবাজ', 'নীল আকাশের নীচে', 'দ্বীপ নেভে নাই', 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'সুজন সখী', 'সারেং বৌ'য়ের মত বহু ব্যবসা সফল এবং আলোচিত সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন।
সারাহ বেগম কবরী
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী শফিউদ্দিন সারওয়ারকে বিয়ের পর তিনি কবরী সারওয়ার নামে পরিচিত পান। ২০০৮ সালে তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। এরপর যখন রাজনীতিতে আসেন এবং সংসদ সদস্য হন, তখন থেকে তিনি সারাহ বেগম কবরী নামে পরিচিত।
মিষ্টি মেয়ে নামেই বেশী পরিচিত ছিলেন কবরী
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সদা হাস্যোজ্জ্বল আসাদুজ্জামান নূর
আসাদুজ্জামান নূর
৯০’র দশকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করে দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।। অভিনয়, আবৃত্তি ও ব্যবসার পাশপাশি রাজনীতিবিদ হিসেবেও সুপরিচিত তিনি। ১৯৭৪ সালে আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘রং এর ফানুস’ নূরের প্রথম টেলিভিশনে অভিনীত নাটক। টেলিভিশনে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫), অয়োময় (১৯৮৮), কোথাও কেউ নেই (১৯৯০), আজ রবিবার (১৯৯৯) ও সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড (১৯৯৯)।
১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান নূর। ১৯৬৫ সালে তিনি নীলফামারী কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
'কোথাও কেউ নেই' নাটকের একটি দৃশ্যে আসাদুজ্জামান নূর
নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবার পর ১২ই জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।
আসাদুজ্জামান নূর
২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দেশ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
হাস্যোজ্জ্বল তারানা হালিম
তারানা হালিম
বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে, পাঁচ বছর বয়সে ঘুঘু ও শিকারী শিরোনামের একটি নাটকে “পিঁপড়া” চরিত্রে কাজ করার মধ্য দিয়ে অভিনয়ে তারানা হাতেখড়ি ঘটে। পরবর্তীতে কলেজে অধ্যয়নের শুরুতে অভিনয় করেন ঢাকায় থাকি টেলিভিশন নাটকে। চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুকের সঙ্গে তার ছোট বোনের চরিত্রে ‘’সাহেব’’ শিরোনামের বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর অলোচনায় আসেন তিনি।
কৈশোর বয়স থেকেই রাজনিতীর প্রতি ঝোঁক ছিল তারানা হালিমের
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অয়োময় টেলিভিশন নাটকেে “মদিনা” চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের আকর্শন করেন তিনি। তিনি আমজাদ হোসেন পরিচালিতা গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন।
কৈশোর বয়স থেকেই রাজনিতীর প্রতি তার ঝোঁক ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে একই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তারানা হালিম অভিনীত 'গোলাপী এখন ট্রেনে' সিনেমার পোস্টার
২০০৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে কর্তব্যরত রয়েছেন বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে।
পপসম্রাজ্ঞী মমতাজ
মমতাজ বেগম
এক দরিদ্র বাউল পরিবারে জন্ম। শৈশব- কৈশোর-যৌবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে চরম অভাব আর দৈন্যতায়। বাবা মধু বয়াতির ছিল ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। ঘরহীন, সংসারহীন বাউল বাবার হাত ধরেই শিল্পী মমতাজের গানের ভুবনে পথ চলা। গানকে সঙ্গী করেই জীবনের সমস্ত ক্ষুধা নিবারণের এক জীবন্ত উদাহরণ কিংবদন্তি মমতাজ।
কোনো বাধা-প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি গানপাগল মমতাজের স্বপ্নকে। গান দিয়েই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। হাজারো দুঃখের মাঝে গান গেয়েই আনন্দ খুঁজে পান। গানেই প্রেম-ভালোবাসা, গানেই বিরহ অনুভূত করে চলছেন। ফলে সংসারজীবনের অস্থিরতা থাকলেও তা সংগীত জীবনের কোনো ছন্দপতন ঘটাতে পারেনি।
কোনো প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি মমতাজকে
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংসদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে ভোটে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে পরাজিত হন।
তাকে বলা হতো 'দুই বাংলার নায়ক'
ফেরদৌস আহমেদ
ফেরদৌস অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র নায়ক সালমান শাহর অসমাপ্ত কাজ বুকের ভিতর আগুন। এরপর ১৯৯৮ সালে এককভাবে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত পৃথিবী আমারে চায় না ছবির মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ১৯৯৮ সালে ভারতের চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার ছবি হঠাৎ বৃষ্টি ছবির মাধ্যমে।
ফেরদৌসের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র 'হঠাত বৃষ্টি'
এছাড়া তার অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গঙ্গাযাত্রা, কুসুম কুসুম প্রেম, এক কাপ চা, পৃথিবী আমারে চায় না, প্রেমের জ্বালা, বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ, প্রাণের মানুষ, নন্দিত নরকে, চন্দ্রকথা, আমার আছে জল, খায়রুন সুন্দরী, দুই নয়নের আলো, ফুলের মত বউ, গোলাপী এখন বিলাতে, গেরিলা, বৃহন্নলা, মিট্টি, টক ঝাল মিষ্টি, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, অবুঝ বউ, চুপি চুপি, এই মন চায় যে, সবার উপরে প্রেম, রানীকুঠির বাকী ইতিহাস, রাক্ষুসী ইত্যাদি।
প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েই চমক দেখিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জিতেছেন তিনি।
ঢাকা-১০ আসন থেকে মনোনীত সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ
সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ পাঠ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ফেরদৌস বলেন, আমার ওপর যে বিশ্বাস-আস্থা দল ও ভোটারসহ এলাকাবাসী রেখেছেন তার প্রতিদান যেন দিতে পারি। কোনো কাজ বিঘ্নিত না হয় সে চেষ্টাই করে যাবো।
ফেরদৌস আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই, আমাকে বিশ্বাস করে ঢাকা-১০’র মতো এ রকম একটি আসন দেওয়ার জন্য। সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ, যারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আজকে শপথ নিলাম, সংসদের যে পবিত্রতা সেটা আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। আর যে ব্রত নিয়ে এসেছি (মানুষের সেবা ও কল্যাণে কাজ করা), সেটা সততার সঙ্গে শতভাগ পূরণ করার চেষ্টা করব। ঢাকা-১০কে আমি প্রকৃত অর্থেই দশে দশ করে তুলব।