ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমের তিতাস নদীর কুল ঘেঁষা এ গ্রামের অবস্থান। নিচু এলাকা হওয়ায় ওই গ্রামের বিস্তৃর্ণ আবাদি জমি বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর শুরু হয় আমন আবাদ। আমনের ফসল ঘরে তুলে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পরে শীতের সবজি আবাদে।
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই চার মাস নানা জাতের সবজিতে যেন গোটা গ্রামটি সেজেছে সবুজ আর সবুজে। ধানের চাইতে সবজি চাষে অধিকতর লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিলের জমিতে করলা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো,খিরাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হচ্ছে উচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়ে চলতি মৌসুমে বনগজ এলাকায় ৪০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। তার মধ্যে উচ্ছের আবাদ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় বাজার গুলিতে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এখানকার উচ্ছে। কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান মতে চলতি শীত মৌসুমে শুধু মাত্র বনগজ থেকে প্রায় ৫ শত ৪২ মেট্রিকটন উচ্ছে বিক্রি হবে।যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ টাকা।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বনগজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার দাপটে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়লেও এখানকার কৃষকদের থামাতে পারেনি। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে ফসলের মাঠে। এসময় মাঠে কাজ করা কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধানের চাইতে উচ্ছে চাষ লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে তারা উচ্ছেসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন। ফলে এ চাষে বদলে দিয়েছে এ গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভাগ্যের চাকা।
তারা সকাল থেকে জমি থেকে উচ্ছে সংগ্রহ করার পাশাপাশি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উচ্ছের পাশাপাশি নানা জাতের সবজিতে গোটা গ্রামটি সেজেছে সবুজ আর সবুজে। চলতি মৌসুমে শুরুর দিকে বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এখন কুয়াশায়ও কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তবে অনুকূল আবহাওয়া আর দর ভালো থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হবে বলে আশা করছেন তারা। এখন জমি থেকে কেজি প্রতি ৩০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
বনগজ গ্রামের কৃষক মো. মহসিন, তিনি সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে উচ্ছের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ২৫-২৬ হাজার টাকা। যে ফলন আসবে তাতে বিঘা প্রতি ৭০-৭৫ হাজার টাকার উচ্ছে বিক্রি করতে পারবেন। আবাদের প্রথম দিকে বৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হলেও ফলনের অবস্থা ভালো আছে। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি তার লাভ হবে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
মো. বিল্লাল নামে এক কৃষক বলেন, আগে বাজারে নিয়ে উচ্ছে বিক্রি করতে হতো। এখন রাস্তা ঘাট ভালো থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আর পাইকাররা জমিতে এসে কিনে নিয়ে যায়। এ বছর প্রথমে বৃষ্টি আর এখন কুয়াশায় কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তবু আশা করছি উচ্ছে বিক্রি করে আমার লাখ দুয়েক টাকার মতো লাভ হবে। প্রতিবছর শীতের সময়টাতে উচ্ছে চাষ করে ভালো টাকা আয় হয়।
মো. শহিদুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ধানের চাইতে উচ্ছে চাষে লাভ বেশি। বিঘা প্রতি ধান পাওয়া যায় ২০ মন আর উচ্ছে পাওয়া যায় ৬০ থেকে ৭০ মন। তিনি দেড় বিঘা জমিতে উচ্ছে চাষ করেছেন। ৩০ টাকা কেজি দরে তিনি উচ্ছে বিক্রি করছেন।এতে বিঘা প্রতি তার বিক্রি হবে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ ব্লকে ৪০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ হেক্টর জমিতে উচ্ছে চাষ করা হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৬০ মন উচ্ছে কৃষকরা পেয়ে থাকে। বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। এতে বিঘা প্রতি ৭২ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। তাতে তারা দিগুণের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। এখন যেহেতু বৈরী আবহাওয়া চলছে। আমাদের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সার্বক্ষনিক কৃষকদের পাশে থেকে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি যে, এই ৩০ হেক্টর জমি থেকে কৃষকরা ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার উচ্ছে বিক্রি করে তারা দিগুণের চেয়ে বেশি লাভবান হবে।