সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫ ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫
উদ্বোধনের দুই সপ্তাহে বন্ধ প্রায় অর্ধকোটি টাকার লিফট সেবা
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১:০৮ PM
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনটি সর্বোচ্চ বহুতল একাডেমিক ভবন।

এ ভবনের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ তলা সম্প্রসারণের কাজের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কোন ভবনে দুটি লিফট স্থাপনের অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার বাজেট ছিল ৪২ লাখ টাকা। 

গত বছরের ০৩ জুন লিফট দুটির উদ্বোধন করা হয়। তবে উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ না যেতেই বন্ধ করা হয় লিফটের সেবা। ওভারলোড ও টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারপর পেরিয়ে গেছে ৯ মাসের মত সময়। তবে অকেজো লিফট দুইটি সচল করার জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণকরে দেখা যায় নি। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ অনুষদের আওতায় থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। যার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। বিশেষ করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। সিঁড়ি করে বহুতল ভবনে উঠানামা করতে হয় তাঁদের। 


সূত্রমতে, 'পিডব্লিওডি' শিডিউল অব রেটস-২০১৮ অনুযায়ী বাজারের সর্বনিম্ন তালিকাভুক্ত 'সি ক্যাটাগরির' লিফটের মূল্য তালিকায় রয়েছে স্থাপিত লিফট দুটি। 'সি' ক্যাটাগরির এলজিএস, গোল্ড স্টার, সিগমাসহ ৪টি ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করে লিফট বসানোর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য থেকে সিগমা ব্র্যান্ডের কোরিয়ান দুটি লিফট গত ৩ মে স্থাপন করে সনেট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা।  'পিডব্লিওডি'র তালিকা অনুযায়ী 'বি' ক্যাটাগরিতে উল্লিখিত প্রতিটি লিফটের মূল্য রয়েছে ৩১ লাখ ও 'এ' ক্যাটাগরির লিফটের মূল্য ৪০ লাখ টাকা করে। পরে প্রতি তলা অনুযায়ী বাড়ানো হয় লিফটের দাম।


তবে একাডেমিক ভবনে যেখানে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে সেখানে মাত্র ৬ জন বহন করার ধারণা ক্ষমতা সম্পন্ন 'সি' ক্যাটাগরির নিম্নমানের লিফট স্থাপন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো প্রয়োজনে ৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী উঠায় কোনোপ্রকার অভারলোড সিগনাল ব্যতীত ভেতর থেকে লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। এতে আটকে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত লিফটে অটোমেটিক রেস্কিউ সিস্টেম থাকার কথা থাকলেও নিম্নমানের এই লিফটগুলোতে সেরকম কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। এতে শিক্ষার্থীদের লিফটে  আটকে পড়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে দেখা গেছে। 

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেও একদিন লিফটে আটকে পড়েন। এ সময় লিফটের দুই পাশ টেনে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওভারলোড কন্ট্রোল ও অটোমেটিক উদ্ধারের মত গুরুত্বপূর্ণ সেন্সর না থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানা যায়। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন , 'এ ভবনের একদম ষষ্ঠ তলায় আমাদের ক্লাসরুম। প্রতিনিয়ত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা-নামা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারীতার মাধ্যমে নিন্মমানের লিফট ক্রয় করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। এ সমস্যার আশু সমাধান কামনা করছি, এতে আমিসহ এ অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে।'

অকেজো লিফট চালু করতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, 'প্রায় দুই মাস আগে আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল খুব শীঘ্রই লোকবল নিয়োগ করে লিফট চালু করা হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে কাজ শুরু করার জন্য বলা হলেও দুই মাসেও কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। 

এ বিষয়ে প্রকৌশল অফিসের প্রধান প্রকৌশলী এ. কে. এম শরীফ উদ্দিন বলেন, 'ব্যবসায় প্রশাসন ভবনের লিফট চালু করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশনা এসেছিল। পরবর্তীতে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৌশল অফিস থেকে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকা:) মোঃ আব্দুল মালেক মিয়াকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। লিফটের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে বিস্তারিত তিনি বলতে পারবেন।'

প্রকৌশল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকা:) মোঃ আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, 'লিফট সংস্কার করে পুনরায় চালু করার বিষয়ে আমরা প্রশাসন থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছিলাম এবং কাজও শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শুরু করার অন্যতম বাঁধা জনবল সংকট। লিফট পরিচালনার জন্য ন্যুনতম দুইজন লোক চেয়ে আমরা প্রশাসন বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। প্রশাসন এ ব্যাপারে এখনো আমাদের কোনো জনবল বা সিদ্ধান্ত দেয়নি। জনবল পেলেই আমরা যতদ্রুত সম্ভব তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করবো।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, 'লিফট সংস্কারের ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত হোসেন আজাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো জরুরি ফাইল তাই ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায়িত্বে নিয়ে আসলে দ্রুত কাজ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা আনেনি, এই কারণে আটকে আছে। যদি এটা নিয়ে কোন আন্দোলন হতো তাহলে কিন্তু তারা নিজ দায়িত্বে ফাইল নিয়ে আসতো।'
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত