সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫ ৬ শ্রাবণ ১৪৩২
সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫
শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন মধুর ক্যান্টিনের সেই ‘মধুদা’
মশিউর অর্ণব
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪, ৬:১১ PM আপডেট: ২৪.০৩.২০২৪ ৮:১১ PM
শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন মধুসূদন দে। যাকে সবাই ডাকতো ‘মধুদা’ নামে। যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সাধারণ ‘চা দোকানি’। কিন্তু স্বাধিকার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকায় তার ছিল প্রভাব। তাই তো পেশাগত পরিচয়ের বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রমীভাবে তাকে দেওয়া হলো বুদ্ধিজীবীর মর্যাদা।

রোববার (২৪ মার্চ) প্রকাশ করা হয়েছে আরও ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা। এ নিয়ে চার দফায় ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করলো সরকার। এ পর্বের তালিকায় মধুদাকে আন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ ধাপে ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এ তালিকার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, (শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করার ক্ষেত্রে) আমরা দু’এক জায়গায় ব্যতিক্রম করেছি। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুদা, ইনি শিক্ষক, লেখক কিংবা গবেষকও না, শিল্পীও না। উনি এমন একজন ব্যক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই ওনাকে চেনেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক দেশ স্বাধীন সংক্রান্ত যত আন্দোলন হয়েছে, সেখানে ওনার একটা অনন্য ভূমিকা ছিল।

তিনি বলেন, এ রকম কিছু ব্যক্তি বিশেষ বিবেচনায় গেছে (তালিকায় অন্তর্ভুক্ত)। উনি (মধুদা) সাধারণ একজন চায়ের দোকানদার। তিনি আবার বৃদ্ধিজীবী হয় কী করে! কিন্তু ওনার যে অবদান ২৩ বছরে যত নেতাকর্মী দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। বিনা পয়সায় চা খাইয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, তালিকা করার ক্ষেত্রে আমরা আর ব্যতিক্রম করিনি। একটাই করেছি, মধুদারটা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত তার একটা সনদও আছে, যেখানে বঙ্গবন্ধু তাকে (মধুদা) বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মধুর ক্যান্টিন

মধুর ক্যান্টিন












তালিকায় মধুসূধন দে বা মধুদার বাবার নাম লেখা হয়েছে আদিত্ত্ব চন্দ্র দে, মায়ের নাম লেখা হয়েছে যোগমায়া দে। গ্রাম বা মহল্লা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, থানা-রমনা, জেলা-ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কলাভবনের উত্তর-পূর্বদিকে যে রেস্তোরাঁ, মধুদার নামেই এর নাম হয়েছে। মধুদার সেই রেস্তোরাঁ এখন সবার কাছে ‘মধুর ক্যান্টিন’ নামে পরিচিত।

মধুর ক্যান্টিনের ইতিহাস
মধুর ক্যান্টিনেই জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক জন্ম-ইতিহাস। ৪৮-এর ভাষা আন্দোলন, ৪৯-এর বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, ৫২-র আগুনঝরা দিন, ৫৪-র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী যুদ্ধ, ১৯৫৮-৬০ সালের প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এ সবকিছুর সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনের নাম জড়িয়ে আছে গভীর ভাবে।

মধুদার পিতামহ ছিলেন নকরী চন্দ্র। উনিশ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুরের শ্রীনগরের জমিদারদের সাথে নকরী চন্দ্রের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে নকরী চন্দ্র সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। আশ্রয় নেন জমিদার বাবুর জিন্দাবাজার লেনের বাসায়। তার দুই পুত্র আদিত্য চন্দ্র ও নিবারণ চন্দ্র। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নকরী চন্দ্র বড় পুত্র আদিত্য চন্দ্রকে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যবসা প্রসারের দায়িত্ব। নকরী চন্দ্রের মৃত্যুর পর আদিত্য চন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করেন। ব্রিটিশ পুলিশ এ সময় ক্যাম্পাসের আশাপাশের ব্যারাক ও ক্যাম্প প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নেয়। আদিত্য চন্দ্র ব্রিটিশ পুলিশের কাছ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে দুটি ছনের ঘর ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। মধুদার বয়স তখন ১৫ বছর। তিনি ১৯৩৪-৩৫ সাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পিতার সাথে খাবারের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে পক্ষাঘাতে পিতার মৃত্যুর পর মধুদা নিজেই ধরেন ব্যবসার হাল।
মধুসূধন দে

মধুসূধন দে



















১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, মধুদা তৎকালীন ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন-কে একটি ডিম ভেজে খাইয়ে বলেছিলেন, “দাদা পরিস্থিতি ভাল না। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।” মেনন এবং অন্যরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারলেন, কিন্তু মধুদা গেলেন শিববাড়িস্থ কোয়ার্টারে। 

২৬ মার্চ মধুদার বাসায় গিয়ে পাক সেনারা তাঁর স্ত্রী, পুত্র আর পুত্রবধূকে হত্যা করে আর মধুদাকে তুলে নিয়ে যায় জগন্নাথ হলের মাঠে। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক জি.সি. দেবের সাথে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের সবাইকে একসাথে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। মধুদাকে জগন্নাথে নিহত সবার সাথে সেখানেই গণকবরে সমাহিত করা হয়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত