শেষ হইয়াও হইল না শেষ, চট্টগ্রাম বাসির কাছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির ক্ষেত্রে এমন কথাই যেন সত্য হচ্ছে। দুই দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছর নভেম্বর মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে নামে মাত্র উদ্বোধন করা হলেও সর্বসাধারণ এখনো সেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাগাল পায়নি৷ এরপর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে বলা হয়েছিল চলতি মার্চ মাসেই রেম্প ছাড়া যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি। তবে সেই কথাটিও রাখতে পারছেনা সিডিএ। এবার এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে লালখান বাজার প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছে সিডিএ। সেই টার্গেট নিয়ে দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। একই সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির টাইগার পাস পয়েন্টে একটি র্যাম্প নির্মাণের জন্য শতাধিক ছোটবড় গাছও কাটার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছে সিডিএ। তবে এখনো গাছ কাটার অনুমোদন আসেনি৷ তবে একাধিক সূত্র বলছে, যেহেতু এটি দেশের মেগা প্রকল্পগুলির একটি তাই গাছ কাটতে বাঁধ দেবেনা রেলওয়ে।
টাইগার পাস পোলো গ্রাউন্ড মাঠ ও সিআরবি এলাকার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে পাহাড়ের খাঁজে নির্মিত সড়কটি দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সড়ক গুলোর মধ্যে অন্যতম। মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী নামক সড়কটি দিয়ে টাইগার পাস থেকে পোলো গ্রাউন্ড হয়ে কদমতলী মোড় পর্যন্ত নির্বিঘ্নে আসা যাওয়া করা যায়। এই দুই সড়কের মাঝের স্থান দিয়েই নির্মিত হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার একটি র্যাম্প। তার সেই র্যাম্প নির্মাণের জন্য সড়ক দুটির মাঝে থাকা ছোট বড় প্রায় শতাধিক গাছ কাটতে হবে। যদিও এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমানের দাবি,"শতাধিক নয় ৪৪/৪৫টি গাছ কাটতে হবে৷" তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, শতাধিক গাছ হবে না, বড় জোর ৪৪/৪৫টি গাছ কাটতে হবে৷ আপনারা সরাসরি গিয়ে দেখে আসেন, আমার হাতে এই মুহূর্তে তো সব ডাটা নেই।"
সরেজমিন ঘুরে টাইগার পাস মোড় থেকে মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কের সিআইবি সংযোগ সড়কের উপরের থেকে নিচের সড়কে নামার সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ মিটার দীর্ঘ মাঝের জায়গা জুড়ে থাকা সারি সারি গাছ গুলোতে সাদা ও লাল রং দিয়ে আঁকা ইংরেজি নাম্বার দেখা গেছে৷ বড় মাঝারি গাছ গুলোতে নাম্বার দেয়া হলেও তুলনা মূলক ছোট গাছ গুলিতে নাম্বার দেয়া হয়নি৷ বড় ও মাঝারি গাছ কাটা হলে একই সারিতে থাকা ছোট গাছ গুলি অক্ষত রাখার কোন সুযোগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে গাছ কাটার সংখ্যা কম দেখাতেই এই কৌশল অবলম্বন করছে সিডিএ।
সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে দুই সড়কের মাঝের জায়গা দিয়ে র্যাম্পের পিলার নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষার (সয়েল টেস্ট) কাজ শেষ করেছেন তারা৷ টাইগার পাস মোড়ে নির্মিত বাঘের ভাস্কর্য থেকে পোলো গ্রাউন্ড মাঠ পর্যন্ত মার্কিং করা স্পটে এই সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে।
৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রামের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম করণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের প্রয়াত সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে৷ আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে লালখান বাজার প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। প্রথম দিন থেকেই এই ব্যবহারে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত টোল পরিশোধ করতে হবে। এই সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির খুলে দেয়া অংশের চেয়ে আমাদের চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি অনেক দীর্ঘ। সেই হিসেবে আমরা টোলের হার কম রেখেছি৷ ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি নেই। তবে আমাদের চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এই গাড়িগুলো চলাচল করতে পারবে।"
জানা গেছে, ওঠা-নামার পয়েন্ট ভেদে মোটরসাইকেলের জন্য টোল দিতে হবে ১০ ও ১৫ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য ২০ ও ৩০ টাকা, প্রাইভেট কার ৮০ টাকা, জিপগাড়ি ও মাইক্রোবাসের জন্য ১০০ টাকা, মিনিবাসের জন্য ২০০ টাকা এবং বড় বাসের জন্য ২৮০ টাকা। এছাড়া পিকআপ ১৫০ টাকা, চার চাকার ট্রাকের জন্য ২০০ টাকা এবং ৬ চাকার ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলর গাড়ির জন্য সাড়ে চার শ টাকা করে টোল আদায় করা হবে৷ শীঘ্রই এই টোল হার চূড়ান্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী।
এদিকে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোলের মাধ্যমে চউক যে অর্থ আদায় করবে সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশ (চসিক) হিস্যা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। শুক্রবার (২৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ৩৮তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, চউক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানাচ্ছে, টোল আদায় করবে তারা। কিন্তু সেখানে চসিকের হিস্যা কী হবে তা আলাপ করা উচিত ছিল। কারণ সিটি করপোরেশনের জায়গায় এক্সপ্রেসওয়ে বানাবেন, সিটি করপোরেশনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি ওঠা-নামা করবে, আমরা সড়ক সংস্কারে ব্যয় করব অথচ আমাদের কোনো হিস্যা থাকবে না তা হবে না।
১৪টি র্যাম্প সহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে নেয়া এই প্রকল্পের ২ দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এটি পূর্ণ ব্যবহার করা গেলে চট্টগ্রাম শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর, শাহ আমানত বিমান বন্দর ও বঙ্গবন্ধু টাণেল সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পয়েন্টে যাতায়াত দ্রুত ও নির্বিঘ্ন হবে।