চলমান তাপদাহে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুধবার (২৪ এপ্রিল) থেকে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে চট্টগ্রামের দারুল ইরফান একাডেমি।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কেফায়েত উল্লাহ তাঁর প্রতিষ্ঠানটি খোলা রাখার কথা স্বীকার করেছেন ৷ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ ম্যানেজমেন্ট ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ জামায়াতে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
চলমান তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় সারা দেশে সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকার নির্দেশনা জারি করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সরেজমিন নগরীর চান্দগাঁও আবাসিকের এ ব্লকের দুই নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত দারুল ইরফান একাডেমির ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলমান রাখতে দেখা যায়৷ একাডেমিতে প্রবেশের পূর্বে একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের স্কুল ছুটির সময় বাড়ানোর নোটিশেই তাদের জানিয়ে দিয়েছিল ২৪ এপ্রিল থেকে ক্লাস চলবে৷ সেই মোতাবেক আজ তারা তীব্র গরমের মধ্যে একাডেমির নির্দিষ্ট পোষাকে ক্লাস করতে যাচ্ছে। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয় বলে জানায় শিক্ষার্থীরা৷
এই বিষয়ে দারুল ইরফান একাডেমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ'র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথা স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, সরকার ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বললেও আমরা আমাদের ম্যানেজমেন্টের সাথে আলোচনা করে আমাদের একাডেমির ছুটি ২৩ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করেছিলাম৷ সামনে পরীক্ষা তো তাই আজ থেকে তাই প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে৷ দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের লিখিত নির্দেশনার পরো দারুল ইরফান একাডেমি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "সেখানে বলা হয়েছিল পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে পুনরায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হতে পারে। তাই আমরা নিজেরা......।" এটা তো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা বলেছিল আপনারা কি সেই ক্ষমতা রাখেন ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি৷।
চান্দগাঁও আবাসিকের দারুল ইরফান একাডেমির বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে জামায়াতে ইসলামির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে জামায়াতের মদদ পুষ্ট ইসলামি সমাজ কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দের কেউ নেই বলে জানিয়েছেন৷
তবে চান্দগাঁও এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, এই প্রতিষ্ঠানটি একটি আত্মস্বীকৃত জামায়াতি প্রতিষ্ঠান৷ বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এই প্রতিষ্ঠানটি শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা কৌশলে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবির এখান থেকে নিয়মিত দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও একাধিক সহযোগী সংগঠনের নেতারা৷