এই টাডা গরমটা আর কয়ডা দিন থাউক,তাইলেই ধানটা টাইলে তুলতা পারবাম। কথাটি বলছিলেন, সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের খড়মড়িয়া গ্রামের কৃষক মো.শফিকুল ইসলাম।
তিনি আরো বলেন,আমি ১৭ কাটা জমিতে বোরো ধান লাগাইছি। ধান তুলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। কাটা প্রতি ৮/১০ মন করে ধান হচ্ছে। দামও ভাল। শ্রমিকসহ সরকারি দেওয়া ধান সংগ্রহের মেশিন হার্ভেস্টার সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকের ধান তুলতে বেগ পোহাতে হচ্ছে না। আল্লাহর রহমতে আর কয়ডা দিন রোদটা দিয়ে যাক, তাইলে আমিসহ পুরা এলাকার ধান খুব সহজেই টাইলে তুলা যাইবে বলে অনেকে করেন।
উপজেলা গন্ডা ইউনিয়নের সাধার গ্রামের কৃষক সুলতান মাহমুদের সাথে কথা হলে তিনি জানান,আমি ১০কাটা জমিতে বোরো ধান করেছি। কাটা প্রতি প্রায় ৯/১০ মন করে ধান হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, আর কয়েকদিন রোদটা থাকলে কৃষক তাদের ধান সহজেই সংগ্রহ করে ঘরে তুলতে পরবো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এউপজেলার কৃষকেরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হালচাষ দিয়ে বোরো ধান আবাদ করেন। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের সবরকম পরামর্শ প্রদান ও পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় এবার কোন কিছুতেই কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসূমে পৌর শহরসহ উপজেলায় ১৩ ইউনিয়নে ২০ হাজার ৭ শত ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ মেট্রিক টন ধান। এ উপজেলায় বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা , হাইব্রিড ৭৫, ৮১, ৯১,সবুজ সাথী, এসএলএইডএইচ, জাগরনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। এদিকে হঠাৎ কিছু কিছু এলাকায় বিআর ২৮, ২৯, ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও কৃষি বিভাগ খুবই তৎপর ছিল রোগবালাই আক্রান্ত থেকে ফসল রক্ষা করতে। কৃষকদের উদাসিনতায় কিছু জমি ক্ষতি হলেও, এরপরও কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
সরেজমিনে সোমবার সকালে চিরাং ইউনিয়নের কৃষক মো.রেজাউল করিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান , রোদ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে এমৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। সময় মতো পানি, বীজ, সার পাওয়ায় ও সঠিকভাবে জমির পরিচর্যা করায় ধানের ফলন ভালো ফলন হয়। ২ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকী ধান কাটা শেষ হবে। প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে নয় শত থেকে এক হাজার টাকা। এই দামে আমরা খুবই খুশি।
এব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় ৯হাজার ৩শত কৃষককে উফসী ধানের বীজ, ডিএপি সার ও এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। আজ পর্যন্ত হাওর এলাকায় পঞ্চাশ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। উপজেলার হাওর এলাকার ইউনিয়ন সমূহের কিছু বোরো ধানের জমিতে ব্লাষ্ট রোগ আক্রমণে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার উপজেলার সর্বত্রই বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।