ঋতুর এই পালাবদলে প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। এইসময় প্রকৃতি যেমন তার তীব্র রোদের প্রখরতায় হাঁসফাঁস করে তুলছে জনজীবন, ঠিক অন্যদিকে কাল বৈশাখীর ঝড়ের রুদ্ররূপ আর শীতল হাওয়া শান্ত করে তুলছে পরিবেশ। সেই সাথে প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যে সাঁজিয়ে তুলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরকে তৈরি করেছে এক অপার্থিব সবুজ-নিকেতনে। প্রতিবছর গ্রীষ্মের এই সময় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে নেমে আছে পত্রপল্লবের সবুজের ছোঁয়া আর ক্যাম্পাস জুড়ে ভেসে বেড়ায় রং-বেরঙের ফুল-ফলের মন মাতানো গন্ধ।
তাই হয়তো গ্রীষ্মের এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের রূপবৈচিত্র্যের প্রতি বিমোহিত হয়ে কবি দিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায় বলেছেন- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’
বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের অন্যতম নান্দনিক ফুল কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সংযোজন লাল সোনাইল ফুলগুলোর পাশাপাশি নাম না জানা অসংখ্য ফুল সহ গাছ ভর্তি আম-কাঁঠালের বন্যা যেন যার যার স্বীয় সৌন্দর্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ বাড়িয়ে তুলেছে হাজার গুণ।
মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পর সবার আগে চোখে লাগে লাল সোনাইল ফুলের সারি সারি গাছ যেন স্বাগত জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের পর থেকে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারিবদ্ধ জারুল গাছের বেগুনি রঙের আভা মুগ্ধ করে তুলছে সকলকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের রাস্তার দুপাশ বা গোল চত্বরের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর ডালে ডালে দেখা যায় অসংখ্য পত্রমোচী কৃষ্ণচূড়া। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালু ফুলের গাছগুলো তার স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে আপন মনে।
গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রকিব আহমেদ বলেন, "কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ফুলের সৌন্দর্য সত্যিই অপূর্ব ও মনোমুগ্ধকর। এটি কেবল ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে না, বরং প্রকৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে। আমাদের সকলের উচিত এই ফুলের যত্ন নেওয়া এবং এর সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা।"

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি প্লাটুনের সিইউও মোঃ সামিন বখশ সাদী বলেন, "একটি বৃক্ষ তখনই পূর্ণতা পায় যখন তার ডালে ডালে ফুল ও ফল আসে। যার প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় ফুল দিয়ে। পরিষ্কার, রঙিন এবং পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে ২০২২ সালের ২৮শে জুন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন রাস্তার দুপাশে কুবি'র বিএনসিসি প্লাটুনের রোপণ করে উষ্ণমণ্ডলীয় উদ্ভিদ সোনাইল ফুলের গাছ। এর আগেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ও হলের সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করেছি। এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়ার রাস্তার ডানপাশে সারি সারি বকুল ফুলের গাছও রোপণ করেছি। এই কাজে যারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে কুবি'র বিএনসিসি প্লাটুনের পক্ষ থেকে জানাই কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। ভবিষ্যতে এরকম কাজে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। "