গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিত পথচারী, খেটে খাওয়া মানুষ। আরামে চলাচল করতেন পথচারীরা। গাছগুলোতে আশ্রয় নিত পাখিরাও। এখন সেখানে যেন ধুধু মরুভূমি, তীব্র দাবদাহ।
ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেক হিসেবে পরিচিত টেপাখোলা মহল্লার সোহরাওয়ার্দী সরোবর ও আশপাশের এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদের জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উন্নয়নের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩১টি গাছ কেটে ফেলার প্রক্রিয়া শেষ করেছে জেলা পরিষদ। যে কোনো মুহূর্তে কাটা পড়বে গাছগুলো। এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির ওপর অবস্থিত। লেকসহ আশপাশে জেলা পরিষদের মোট ১৮ একর জমিতে লেক উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১৮০ কোটি টাকার চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্প আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। আপাতত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় প্রকল্পটির কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রকল্প পরিচালক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে গাছগুলো গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে। তবে এখনও গাছ কাটা শুরু হয়নি। নিলামে পাওয়া ব্যক্তি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, টেপাখোলা লেকের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে সড়কের পাশে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলোর বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছর। বেশির ভাগই মেহগনি গাছ। পাশাপাশি আম, কাঁঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলোর ওপরের বাকল তুলে লাল রং দিয়ে সংখ্যা লেখা হয়েছে।
গাছ কাটার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে টেপাখোলা এলাকার বাসিন্দা স্বপন মৃধা (৩৮) বলেন, শৈশব থেকেই গাছগুলো দেখে বড় হয়েছি। প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তির আশায় গাছগুলোর নিচে বসতাম। শুনছি এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটতে হবে কেন?
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো রাস্তা ও লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমার কাছে মনে হয়েছে, গাছগুলো রক্ষা করেই প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, কোনো যুক্তিতেই ৬০-৭০ বছরের গাছগুলো কেটে ফেলা মেনে নেওয়া যায় না। গাছগুলো অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাকাহীদ হোসেন বলেন, বড় গাছগুলো রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়। তা ছাড়া ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি ১ হাজার ৭৬২টি গাছ রোপণ করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি মেনে নিতে হচ্ছে।