সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ ২ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ১৬ জুন ২০২৫
এখনও পরিস্কার নয় এমপি আনারের ‘নিখোঁজ রহস্য’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ১:২৩ PM
সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আজীম আনারের ‘নিখোঁজ রহস্য’ নিয়ে জল ক্রমশ ঘোলাই হচ্ছে। ভারতে যাওয়ার পর তিনি কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন, তা নিশ্চিত করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। 

এমপি আজীম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ভারতেও নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন, তিনি বেঁচে নেই। আবার কারও দাবি, তিনি একটি ক্রুজে রয়েছেন। আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের এসআরবি জুয়েলার্স গতকাল বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি বাড়িতে থাকলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।

আজীমের অবস্থান নিশ্চিত হতে দুই দেশের গোয়েন্দারা কাজ করছেন। ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। 

চারটি বিষয় সামনে রেখে চলছে তদন্ত। এক সময় ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত আজীম নিখোঁজ হওয়ার পেছনে আর্থিক কোনো বিরোধ রয়েছে কিনা– তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত শত্রুতা, নারী-সংক্রান্ত বিষয় ও সীমান্তকেন্দ্রিক কারবার নিয়ে বিরোধের জেরে কেউ তাঁকে জিম্মি করেছে কিনা– তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এমপি আজীম ভারতে যাওয়ার পর তাঁর মোবাইল ফোন সিমের ভিন্ন অবস্থান পাওয়া গেছে। তাঁর অবস্থান কখনও মোজাফফরাবাদ, কখনও বেনাপোলের কাছাকাছি আবার কখনও কলকাতা দেখা গেছে। আসলে তিনি কোথায়, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করতে মোবাইল ফোনের অবস্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে কিনা– তারও তদন্ত চলছে। তিনি সেখানে জেরার মুখোমুখি হয়েছেন কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘বাবার দুইটি ফোন নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় রয়েছি আমরা। ভিসা পেলে বাবার খোঁজে ভারতে যাব।’ পূর্ববিরোধের জের ধরে কেউ তাঁকে ফাঁদে ফেলেছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ডরিন বলেন, ‘এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে কী ঘটেছে, আমরা নিশ্চিত নই। ভারতে একটি গাড়ি উদ্ধারের কথা শুনেছি। আমাদের আত্মীয়স্বজন সেখানে গেছেন। কিন্তু দেশটিতে ভোট হওয়ায় ঠিকঠাক তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ 

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অর্থ চেয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি। তাই টাকার জন্য বাবাকে কেউ আটকে রেখেছে– এটাও বলতে পারছি না।’
আজীমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বলেন, ‘এর আগে কখনও তিন ঘণ্টাও নেটওয়ার্কের বাইরে থাকেননি এমপি। তাই আমরা উদ্বিগ্ন। কয়েকদিন চলে গেল, তাঁর কোনো খোঁজ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কোনো তথ্য দিতে পারছে না। শুনেছি কলকাতায় এমপির ফোনের অবস্থান দেখাচ্ছে। তবে এটি নিশ্চিত হতে পারছি না।’

রউফ বলেন, অনেক নেতাকর্মী এমপির খোঁজ নিতে কালীগঞ্জের ভূষণ রোডের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন। সুস্থতা কামনা করে বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও প্রার্থনা করছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা।   

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমপি আনোয়ারুল আজীমের বিষয়ে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কী ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। গুরুত্ব সহকারে তদন্ত হচ্ছে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আজীমের ফোনের একাধিক অবস্থান দেখা গেছে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্ট তথ্য হাতে পাইনি। তবে ভারতে ব্যবহৃত এমপির গাড়ি ও তাঁর চালককে উদ্ধার করা হয়েছে।’

এমপি আজীম একা দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতের গেদে প্রবেশ করেন। এর পর কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় পূর্বপরিচিত স্বর্ণ কারবারি গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। আজীম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বরানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন গোপাল। 

তার দাবি, ‘১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আজীম। এর পর তাঁর হোয়াটসঅ্যাপের একটি খুদেবার্তায় এমপি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। পৌঁছে ফোন করব, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।’ ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটে  আরেকটি মেসেজে জানান, ‘আমি দিল্লি পৌঁছলাম, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছেন। ফোন করার দরকার নেই।’

এক সময় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন আজীম। হুন্ডি কারবার, চোরাচালান ও পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।

ঝিনাইদহের লোকজন জানান, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছিলেন আজীম। সীমান্তকেন্দ্রিক মাদক কারবারে ছিল তাঁর বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, নানা অপরাধে এক সময় তাঁর বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা ছিল। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রভাব বলয় তৈরি করেন। ধীরে ধীরে মামলার সংখ্যা কমতে থাকে। ২০১৪ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কালীগঞ্জে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। চোরাচালানের মধ্য দিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হন।

প্রসঙ্গত, চিকিৎসা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গত ১২ মে ভারতে যান আজীম। পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। গত ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে এমপি আজীমের ফোন থেকে পিএসের নম্বরে সর্বশেষ কল আসে। কলটি ধরতে পারেননি পিএস। এক মিনিট পর পিএস তাঁকে কল করলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এর পর থেকে এমপির সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত