রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ ১ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ১৫ জুন ২০২৫
ঝুঁকিতে ১০ হাজার লোক
সিলেটে টিলা ধসে ৩১ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশ বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪, ২:৪২ PM আপডেট: ১৬.০৬.২০২৪ ২:৪৬ PM
বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই টিলা ধস ও বন্যা আতঙ্ক সিলেটবাসীকে গ্রাস করে। জানমালের ক্ষতি হয়। জমি-জিরাত প্লাবিত হয়। বাড়িঘর ভাসিয়ে নেয়। সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ডুবিয়ে একাকার করে তবেই বর্ষা বিদায় নেয়। সময় বেশ হইচই শুরু হয়। নদনদীর গভীরতা ও বিভাগীয় নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। প্রতিকারের কথা বলা হয়। একসময় সিলেটে পাথর কোয়ারী ধসে প্রাণহানি ঘটনাও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করত। তবে গত কয়েক বছর থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ায় এখন পাথর কোয়ারীতে মৃত্যুর মিছিল থেমেছে। তবে বন্যা ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেই চলছে।


অবাক বিষয় হচ্ছে এসব ঘটনার কিছুদিন পর প্রশাসনের কাছে বিষয়টি যেভাবে চাপা পড়ে। ঠিক তেমনি চাপা পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেও। অথচ প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। অথচ এসবের যেন কোনো প্রতিকার নেই।   ইদানীং বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের চলমান বন্যার মধ্যে পাহাড় ধসে এক পরিবারের ৮ জন চাপা পড়া ও তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা বেশ নাড়া দিয়েছে সচেতনমহলকে। সিলেট-১ আসনের এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেটের জন্য ‘ক্লাইমেট প্রকেটশন ফান্ড’ গঠন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেছেন, টিলা ও পাহাড় কাটা বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব এলাকা গড়তে হবে।


সিলেটে চলমান বন্যায় যখন সাড়ে ৬ লাখ লোককে প্লাবিত করে এবং কৃষি খাত, সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করে, তখন চলছিল ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। আর এ সময়ই সিলেটে  টিলা ধসে প্রাণ হারান এক পরিবারের তিনজন। সূত্র মতে, এর আগে গত ১০ বছরে ২৮ জনসহ সোমবার তিন জন মিলে এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু ঘটে।

গত সোমবার ভোরে প্রবল বর্ষণে নগরীর চামেলীবাগে টিলা ধসে পড়ে সেমিপাকা ঘরের ভেতর চাপা পড়েন ৮ জন। এর মধ্যে পাঁচ জনকে তাত্ক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা হলেও ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর মাটির নিচ থেকে তিনটি মরদেহ বের করে আনে সেনাবাহিনীর দল। তারা হলেন—আগা করিম উদ্দিন, তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার রোজী ও দুই বছরের ছেলে নাফিজ তানিম। নগরীর অদূরে মেজরটিলার চামেলীবাগ আবাসিক এলাকায় ২ নম্বর সড়কে সকাল ৬টার দিকে টিলা ধসে চাপা পড়েন তিন পরিবারের আট জন। স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৭ সালেও এখানেই টিলা ধসে প্রাণ হারান হুনদা নামে এক যুবক।  সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় টিলার ওপর ও পাদদেশে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেছেন। কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও টিলা কাটা বা  ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ হচ্ছে না।


সরে যাওয়ার নিদেশ আছে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই

প্রশাসন এসব এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও দেওয়া হয়নি পুনর্বাসন বা সহায়তার আশ্বাস। চামেলীবাগের বাসিন্দা কয়ছর জানান, সোমবারের ঘটনার পর থেকে এলাকার মানুষের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারেনি। অনেকেই রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে সময় পার করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য।  তিনি বলেন, হঠাত্ করে আমরা কোথায় যাব। আগে আমাদের কিছু বলা হয়নি। চামেলীবাগের মর্মর্স্পী ঘটনার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই বসতবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র।


সিলেট-১ আসনের এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কয়েক বছর ধরে সিলেট প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের বন্যায় বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট। এবারেও  ক্ষতির মুখে সিলেট। বজ্রপাতে সম্প্রতি ঘন ঘন প্রাণহানি ঘটছে এ অঞ্চলে। এছাড়া ঘন ঘন হচ্ছে ভূমিকম্পও। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিলেটের জন্য ‘ক্লাইমেট প্রকেটশন ফান্ড’ গঠন করতে চাই। যাতে সহজেই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সিলেট মহানগরের মেজরটিলার চামেলীবাগ আবাসিক এলাকায় টিল ধসে নিহত তিন জনের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি  বলেন, সিলেটে অবৈধভাবে টিলা কাটা হয় প্রচুর। এগুলো রোধ করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব কাজে জড়িত থাকেন। তাই তাদের মাধ্যমেই টিলার মাটি কাটা রোধ করা প্রয়োজন। গতকাল মঙ্গলবার ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিহতদের বাড়িতে যান। এ সময় তিনি নিহত তিন জনের মা-ভাই ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং ব্যক্তিগত পক্ষ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

এ সময়  উপস্থিত ছিলেন  সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী,  সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরীন আক্তার ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত