বরিশালের গৌরনদীতে ২ ঘন্টা জোরপূর্বক চেষ্টা করে নর্মাল ডেলিভারী করাতে ব্যর্থ হয়ে ভূল চিকিৎসায় শিমু বেগম (২৮) নামে এক প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ান অপারেশনে নবজাতক এক ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পিজিটি গাইনী ডা. মো. এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
গৌরনদী আখি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনিিস্টক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ভূল চিকিৎসার কারণে নবজাতক ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার ও রোগী শিমু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগে রোগীর স্বজনরা গত বৃহস্পতিবার সকালে ক্লিনিক কর্মচারী ও নার্র্সের ওপর চড়া হলে খবর পেয়ে একদল সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌছলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ওইদিন বিকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোগী শিমু বেগমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোগীর স্বামী আগৈলঝাড়া উপজেলার বেলুহার গ্রামের আব্দুর রহিম ভূইয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রী শিমু বেগমের (২৮) প্রসব বেদনা শুরু হলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে গৌরনদী আখি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানের ডিউটি ডাক্তার আমার স্ত্রীর ব্লাডসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করায় ও পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে রাত ১০টার দিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিাকে আমার প্রসূতি স্ত্রীকে ওটিতে নিয়ে জোরপূর্বক নর্মাল ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করে রাত সাড়ে ১২টাার দিকে ব্যর্থ হয়ে আমাকে ক্লিনিকের মালিক জাকির হোসেন জানায় রোগীর সিজার করা লাগবে।
এতে যাবতীয় খরচাসহ সিজারে ২০ হাজার টাকা লাগবে। আমি রাজি হয়ে প্রথম ৭ হাজার টাকা দিলে রাত ১টার দিকে অ্যান্সেথেশিয়ার ডা, মাসুদকে সাথে নিয়ে গাইনী ডা. মো. এনামুল হক আমার স্ত্রী শিমু বেগমের সিজার করেন। এ সময় ক্লিনিকের মালিক জাকির হোসেন আমাকে জানায়, নবজাতক ছেলে সন্তান অসুস্থ নড়েচড়ে না ও কান্নাও করে না। তাই নবজাতককে বরিশাল শেচাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করতে হবে। তাৎক্ষনিক মোবাইল ফোনে জাকির হোসেন ২৫’শ টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ক্লিনিকের সামনে আনেন।
তখন নবজাতক ছেলে সন্তানকে কাঁথা (কাপড়ে) দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ওটি থেকে রাত ২টার দিকে মালিকের বোন হালিমা বেগম নবজাতককে কোলে করে বের হয়ে অ্যম্বুলেন্সে উঠেন। এ সময় আমি অ্যাম্বুলেন্সে উঠে বসলে কাঁথায় পেঁচানো অচেতন নবজাতককে আমার কোলে দিয়ে হালিমা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে যায়।
নবজাতক সন্তান জীবিত আছে কিনা আমি জানতে চাইলে তখন ক্লিনিক মালিক জাকির হোসেন আমাকে জানায়, নবজাতক ছেলে সন্তান জীবিত আছে, বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যাবে ও অ্যাম্বুলেন্স চালককে ২৫’শ টাকা ভাড়া দিয়ে দিতে বলেন। রাত সাড়ে ৩ দিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নবজাতককে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন নবজাতক আগেই মারা গেছে।
তিনি আরো বলেন, ওই ক্লিনিকে ৯দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরও আমার স্ত্রীর প্রসাব বন্ধ হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ১০ টার দিকে সে (শিমু) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়ে আমার আত্মীয় স্বজনরা ক্লিনিকে ভিড় করে। ভূল চিকিৎসার কারণে নবজাতক ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার ও স্ত্রী শিমু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগে স্বজনরা ক্লিনিক কর্মচারী ও নার্র্সের ওপর চড়া হয়।
খবর পেয়ে একদল সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌছলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর আমি গৌরনদী সেনা ক্যাম্পে গিয়ে পুরো ঘটনা বললে তারা আমাকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
উল্লেখিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও র্ভিত্তিহীন দাবি করে পিজিটি গাইনী ডা. মো. এনামুল হক বলেন, সিজারের পর নবজাতক ছেলে সন্তানের হাটবিট ছিল, কিন্তু কান্না করেনি। তাই তাৎক্ষনিক নবজাতককে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছিল। প্রসূতি মায়ের অবসট্রাকটেট লেবার অবস্থায় থাকার কারণে প্রসাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা কিন্তু সিজারিয়ান অপারেশনের কারণে রোগীর এ সমস্যা হয়নি।
আখি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সিরাজুল ইসলাম ও ম্যানেজার জাকির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রসূতি মা শিমু বেগমকে তার স্বজনরা প্রথমে খ্রীষ্টান মিশনে নিয়ে ধাত্রি দিয়ে নর্মাল ডেলিভারী করাতে ব্যর্থ হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। আমরা ওই প্রসূতি মায়ের অবস্থা খারাপ অবস্থা দেখে ক্লিনিকে ভর্তি করতে চাইনি।
প্রসূতি মায়ের স্বামী কান্না ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সিজার করার জন্য পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। রোগীর স্বামীর অনুরোধের পর লিখিত নিয়ে রোগীকে ভর্তি করে সার্জারি ডাক্তার ডেকে সিজার করাই। ওই রোগীকে আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি।
গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।