সোমবার ৩০ জুন ২০২৫ ১৬ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৩০ জুন ২০২৫
চলন্ত বাসে ডাকাতির পর নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৮ AM আপডেট: ২৬.০২.২০২৫ ১:৪১ AM
মধ্যরাতে ডাকাতির শিকার হওয়া বাসটি প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতদের দখলে ছিল। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন বাসটিতে থাকা যাত্রীরা।

যাত্রীদের বর্ণনায় সেই রাত
২২ বছর বয়সী সোহাগ হাসান পেশায় ব্যবসায়ী। তার বাড়ি বড়াইগ্রামেই। ব্যবসার কাজে এই গ্রামেরই ওমর আলী এবং তিনি একসাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন।

তিনি বলছিলেন, গাড়ি যাত্রী বোঝাই থাকলেও গাড়ির চালক ও তার সহযোগীরা আরও সাত-আটজনকে মাঝপথে গাড়িতে তুলে এবং তারপর গাড়ির চালকের আসনে তাদেরই একজন বসে পড়ে।

ওই দলের বাকিরা তখন যাত্রীদের কাছে চলে আসে এবং গলায় চাকু ধরে। তারা বাসের আলো জ্বালাতে নিষেধ করেছিল।

"আর সবচেয়ে বড় কথা, সবার সামনে ওরা চাকু নিয়ে দাঁড়ায়ে ছিল। পাঁচ-ছয়জনকে ছুরিও মারে ওরা। এই ভয়ে কেউ কোনও কথা বলেনি। সবার মাথা নিচু করে ছিল। ওরা বলছিলো, চোখ বন্ধ কইরা থাকবি। তাকাইলে কানা করে দিবো"

এসময় তারা কথা বলতে পারছিলেন না, মাথা উঁচু করতে পারছিলেন না, চোখ খুলতে পারছিলেন না। শুধুই বাসের দুই নারী যাত্রীর চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ শুনছিলেন।

"ওই দুইজনের সিট ছিল বাসের মাঝামাঝি। তাদের মাঝে একজন হিন্দু, তার সাথে তার স্বামীও ছিলেন"

"এরপর চিকন করে একজন ছেলে আমাদের সামনেই ওই মহিলাকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। ওর স্বামী বাধা দিতে গেলে স্বামীকে অনেক মারধর করে"

"এরা যে পরিমাণ... উনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছে। পিছে নিয়ে গেলে উনি অনেক চিৎকার করছিলো। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিলো না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদতেছিলো। কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না"

গুড় ব্যবসায়ী ৭৩ বছর বয়সী মজনু আকন্দও সেদিন ওই বাসে ছিলেন। তিনিও বলেন, "ওই রাতে আমরা যে চিল্লাচিল্লি শুনছি... তাতে মা-বোনের ইজ্জতের...গাড়ির ভেতরে আমাদের কোনও ভাষা ছিল না। ওনাদের মানসম্মানের ক্ষতি করছে, ধস্তাধস্তি করছে।"

তিনিও বলছিলেন যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন দুইজন নারী। একজনের বয়স ছিল আনুমানিক ২০ বছর, আরেকজনের ২৫-৩০ বছর।

"আরেকজন মহিলা, ২৫-৩০ বছর বয়স হবে। ওনার সবকিছুই নিয়ে নিছে। উনি আমাদের দুই সিট সামনে ছিল। আমাদের তাকাইতে দিচ্ছিলো না। ওনার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিচ্ছিলো। আমরা যখন বারবার প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি, তখন আমাদের মারতে চেষ্টা করে...পেছনে শুধু হিন্দু মেয়েটাকেই নিয়ে যায়। আর ওনার সাথে সিটের ওখানে বসেই জোরজবরদস্তি করে।"

গণধর্ষণ ছাড়াও ঘটেছে ব্যাপক শ্লীলতাহানি 
সোহাগ হাসানের ভাষায়, "উনি (হিন্দু নারী) বাস থেকে নামার পর ওনার কান্নাকাটি দেখে আমরা সবাই ভেঙে পড়ি। উনি পুলিশের সামনে মান-সম্মানের পরোয়া না করে যতটুকু বলা যায়, বলছে। থানায় যা বলেছিলো... আর ভেঙে বলার দরকার নাই, আমরা তো কিছুটা বুঝি...।"

"ওই দুই নারী বড়াইগ্রামেই নেমে পুলিশের কাছে মুখে মুখে জবানবন্দি দিয়ে অন্য বাসে করে নিজ নিজ বাসায় চলে গেছে। মেয়ে দুইটা আমার ফোন থেকে বাসায়ও কল দিছিলো। কিন্তু ওইদিন আমার ফোন থেকে ৪০ জনের বেশি কল দিছে"

এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক হালিম খান যাত্রীদের বরাতে বলেছেন, "যাত্রীরা বলছে যে দুইজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নারী যাত্রী যারা ছিল, সবাই শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। যেভাবে যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো হয়, তা হয়েছে। এটা বলা যায়।"

"কিন্তু ধর্ষণের ব্যাপারে তারা বলছে যে পেছনের দিকে দু'জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়... ওই নারীদেরকে তো পাওয়া যায়নি। হয়তো তারা পথে নেমে গিয়েছে। এটার তো ডকুমেন্টারি কিছু নাই। তবে শ্লীলতাহানি হয়েছে ভয়াবহ"
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত