বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে কার্যকর শুল্ক হার দাঁড়াবে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও বিদ্যমান শুল্ক সাড়ে ১৬ শতাংশ।
পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে কার্যকর শুল্ক হার দাঁড়াবে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও বিদ্যমান শুল্ক সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু সেখানে রফতানি করা তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল থাকলে ওই পালটা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করে তৈরি পোশাক মার্কিন বাজারে রপ্তানি করলে কিছুটা শুল্ক ছাড় পাবে বাংলাদেশ।
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) । উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের রপ্তানির উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, ২ এপ্রিল ঘোষিত শুল্ক বাস্তবায়ন ৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত বেস ট্যারিফ কার্যকর হয়। ৯০ দিনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় শেষ হলেও আলোচনায় অনিশ্চয়তা ছিল। জুনের মাঝামাঝি জানতে পারি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গোপনীয়তা চুক্তির (NDA) আওতায় খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বেসরকারি খাত এতে সরাসরি যুক্ত ছিল না, তাই উদ্বেগ ছিল কী হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে। এসব চুক্তি সম্পাদিত হলে সংশ্লিষ্ট দেশের শুল্ক আরও কমে যেতে পারে। তাই বাংলাদেশকেও আলোচনায় সক্রিয় থেকে শুল্ক কমানোর সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
মাহমুদ হাসান খান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শুধু বড় বাজার না, তারা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য অংশীদার। এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী গড়ে তোলার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। যুক্তরাষ্ট্র একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে, যা বিগত প্রায় চার মাস ধরে আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে, যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি। যেমন চীনের শুল্ক ৩০ শতাংশ ও ভারতের ২৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার সচেষ্ট থাকবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলতে চাই আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তাদের টিম এই কঠিন আলোচনার সময় যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তাদের প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ একটি সমূহ বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে। তবে এই ফলাফল একদিনে আসেনি, যাত্রাটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের।
তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সরকারকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করতে, মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। বিজিএমইএ থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। আমরা তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতামত এবং বোর্ড সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কাজ করব।