মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার আকবরপুর গ্রামের কৃষক মান্নান মিয়া প্রমাণ করে দিয়েছেন সাহস ও আগ্রহ থাকলে অপ্রচলিত ফল চাষেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তিনি নিজ উদ্যোগে কুষ্টিয়া থেকে রাম্বুটান ফলের চারা এনে তার ফলবাগানে রোপন করেন। তিনটি চারা এনে বর্তমানে সেখানে রয়েছে ২৫টি রাম্বুটান গাছ।
রাম্বুটান একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং উষ্ণমন্ডলীয় ফল যা বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এটি স্বাদে অতুলনীয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। 'লোমযুক্ত ফল' নামেও পরিচিত এই ফলটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য একটি সম্ভাবনাময় প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ ফল স্বাদে ও গন্ধে প্রায় লিচুর মতো।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। ফলটির উচ্চ বাজারমূল্য এবং ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে চাষিরা এটি থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থ উপার্জন করছেন।
রাম্বুটানের চাষ এখন শুধু শখ নয়, এটি লাভজনক একটি কৃষি উদ্যোগে রূপ নিচ্ছে। এই ফল চাষের মাধ্যমে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে। রাম্বুটান গাছ মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ট্রপিক্যাল ফলদ গাছ। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটি চাষ করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মান্নান মিয়া সফলভাবে এই চাষে দক্ষতা দেখিয়েছেন।
প্রায় পাঁচ বছর আগে মান্নান মিয়া কুষ্টিয়ার এক নার্সারি থেকে সংগ্রহ করেন রাম্বুটানের ৩টি চারা। পরিচর্যা করতে হয় বিশেষ যত্নে। গাছের বেড়ে ওঠা, সঠিক পানি সরবরাহ, পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা সবকিছুতেই দিতে হয়েছে নিবিড় মনোযোগ। গাছ রোপণের তিন বছর পর থেকে গাছে ফল আসতে শুরু করে।
গত দুই বছর ধরে তিনি নিয়মিত রাম্বুটান ফল বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজার ও পরিচিতদের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন প্রায় ২৫ হাজার টাকার ফল।
এ বছর তার বাগানে গাছপ্রতি ৫০-৭০টি রাম্বুটান ফল ধরেছে। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলনের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
মান্নান মিয়া বলেন, প্রথমে শুধু শখের বসে গাছ লাগাই। এখন দেখছি এই ফলের বাজার চাহিদা অনেক। যারা খেয়েছেন তারা আবার চাচ্ছেন। এখন আরও চারা রোপণের পরিকল্পনা করছি।
আকবরপুরের অনেকেই এখন এই ফল দেখতে এবং চাষ সম্পর্কে জানতে মান্নান মিয়ার বাগানে যান। অনেকেই বলছেন, রাম্বুটান চাষে এমন সাফল্য নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, মান্নান মিয়ার এই উদ্যোগ অন্য কৃষকদের জন্য অনুকরণীয়। এ ধরনের অপ্রচলিত ফল চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশের ফল উৎপাদনে বৈচিত্র্য আসবে।