তিনজনকে আটকে রেখে নিজের ‘টর্চার সেলে’ মারধর করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দার এক ছাত্রদল নেতা। তার নাম হিজবুল আলম ওরফে জিয়েস। তিনি তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।
হিজবুলের মারধরের শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক ও মাঝিয়ালি গ্রামের বাসিন্দা মামুন সরকার। স্থানীয় বাজারে চাঁদার জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তিনি হিজবুলের হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গতকাল সোমবার থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হিজবুল এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবনকারী ও চাঁদাবাজ। তিনি স্থানীয় মাঝিয়ালি বাজারে বিভিন্ন দোকানদারের কাছ থেকে মালামাল নেওয়ার পর টাকা দেন না। ৮ আগস্ট হিজবুল স্থানীয় বাজারে হক মিয়ার সেলুনে চুল কাটিয়ে বিল পরিশোধ করেননি। টাকা চাইলে উল্টো পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন হিজবুল। একপর্যায়ে হক মিয়া ও তাঁর বড় ভাই লাক মিয়াকে মারধর করে দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। বিষয়টি মামুনকে জানালে তিনি দোকান খুলে ব্যবসা করতে বলেন। পরের দিন ৯ আগস্ট দোকানটি খোলা পেয়ে হিজবুল ‘টাকা না দিয়া কার কথায় দোকান খুলছস’ বলে হক মিয়াকে মারধর করেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে মামুন সরকারও মারধরের শিকার হন।
পরে মামুন সরকারের করা মামলায় গতকাল ভোরে হিজবুলের তারাকান্দার দিঘারকান্দা গ্রামের মো. রাফি (১৯) এবং মাঝিয়ালি উত্তরপাড়া গ্রামের মো. আবদুল্লাহকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, হিজবুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
হিজবুলের সেই টর্চার সেল
যেভাবে হয় নির্যাতন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিজের আস্তানায় নিয়ে মুঠোফোনে হিন্দি-বাংলা গান ছেড়ে একজনকে মারছেন হিজবুল। যাকে মারা হচ্ছিল, তাঁর নাম মো. জুয়েল মিয়া (২৭)। তিনি পেশায় দিনমজুর।
ভিডিওতে দেখা যায়, হিজবুল নিজের হাতে দেশি একধরনের বিশেষ অস্ত্র দেখিয়ে সঙ্গে থাকা অন্যজনকে মারতে বলেন। পরে সঙ্গে থাকা সেই যুবককে মারতে থাকেন জুয়েল। একপর্যায়ে হিজবুলও মারধর করতে থাকেন।
মো. রাসেল মিয়ার অভিযোগ, ‘আমাকে ফোন দিয়ে নিয়ে আটকে মারধর করে। আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়ে মারধর করে, সেটির ভিডিও করতে চায়। পরে আমি ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথায় রাজি হয়ে সেখান থেকে মুক্তি পাই। মারধর করে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় কাউকে কিছু না বলতে বলে দেয়। আমাদের কেন আটকে মারধর করল, আমরা এর বিচার চাই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী মোজাম্মেল সরকার বলেন, ভিডিওতে যা দেখা গেছে, তা ভয়াবহ। মধ্যযুগীয় কায়দায় গান বাজিয়ে ঘরে আটকে মারধর করে। পুলিশ ‘টর্চার সেলের’ তালা ভেঙে ভেতর থেকে মারধরের সরঞ্জাম ও বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাম্প পেয়েছে। মানুষকে এখানে ধরে এনে জিম্মি করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বসিয়ে স্বাক্ষর রাখত। যার কাছে চাঁদা চাইত, না দিলেই মারধর করত, কাউকে মানত না। এলাকার সবাই তার নির্যাতনের শিকার, কেউ ভয়ে মুখ খুলেন না।