গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে বহুল আলোচিত আসাদুল জুয়ারু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার ১৭ মাস পর দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তদন্তের পর অবশেষে সন্দেহভাজন ২আসামিকে গ্রেফতারের পর এহত্যার রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয় পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পলাশবাড়ী উপজেলার আমবাড়ী গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৫) ও সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কাবিলপুর সোনাতলা গ্রামের রেজাউল ইসলামের মেয়ে সীমা আক্তার (২১)।
একটি সূত্রে জানা যায়, নিহত আসাদুল মিয়া ও আসামি হাবিবুর রহমানের মধ্যে গ্রেপ্তার সীমা আক্তারের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও দেহব্যবসার বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আসাদুল ও হাবিবুর সীমাকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে দেহব্যবসা ও অর্থ লেনদেনের কাজ চালাচ্ছিল।
এরই মধ্যে আসাদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী বেলা বেগম বিষয়টি জানতে পেরে সীমাকে একাধিকবার সতর্ক করেন। এরইমধ্যে তাদের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে দু,জনার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। এই সুযোগে হাবিবুর সীমাকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
২০২৪ সালের ৭ জুন রাতে সীমা মোবাইলে আসাদুলকে দেখা করতে বলে। সে মোতাবেক ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড়ে তারা দেখা করে। সেখানে আসাদুল জানতে পারে হাবিবুর ও সীমা ঢাকায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। বিষয়টি নিয়ে তিনজনের মধ্যে তুমুল বাগ বিতন্ডা হয়।পরে স্থানীয়রা তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়।
পরদিন ৮ জুন ২০২৪ রাত ৯টার দিকে হাবিবুর জুয়ার খেলার কথা বলে আসাদুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। পরে বেলা বেগমকে ফোনে আসাদুল জানায় সে ঢাকায় যাচ্ছে। এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায় এবং হাবিবুর ও সীমাকেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
৯ জুন ২০২৪ বিকেল ৬টার দিকে ইদিলপুর ইউনিয়নের একবারপুর গ্রামের পূর্ব পাশে উঁচু ব্রীজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় আসাদুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে নিহতের ভাই মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন মামলাটির কোন ক্লু পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস আই সুপদ হালদার। তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে পুনরায় তদন্ত শুরু করেন এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটন করেন।
গত ১১ নভেম্বর রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পলাশবাড়ী এলাকা থেকে হাবিবুর রহমান ও ইদিলপুরের কাবিলপুর সোনালতা থেকে সীমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
এসআই সুপদ হালদার জানান, আসাদুলকে হত্যার পর হাবিবুর ও সীমা ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছিল। সম্প্রতি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তদন্তে জানা গেছে, নিহত আসাদুল ও হাবিবুর একে অপরের বন্ধু ছিলেন এবং তারা সীমা আক্তার কে দিয়ে দেহব্যবসা ছাড়াও ফিটিংস ব্যবসায় ব্যবহার করতেন।তাছাড়া জুয়ার পাটনার সিপ নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। ব্যবসায়িক স্বার্থ ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, “এসআই সুপদ হালদার অল্প সময়ের মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে দুইজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আসামিদ্বয়কে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।”