বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি আজ গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার নানা দেশে বসবাসরত এই প্রবাসীরা দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কামনা করছেন। তাদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে প্রবাসীদের জীবন, আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। প্রতি বছর প্রায় ২.৫ কোটি বাংলাদেশি শ্রমিক ও প্রবাসী নাগরিক দেশকে পাঠান বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, যা জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে।
তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অস্থিরতা দেখে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, যদি দেশে স্থিতিশীলতা না থাকে বা রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তবে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসী কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যদি শান্তি না থাকে, রাজনীতি নিয়ে সংঘাত চলতে থাকে তাহলে প্রবাসীরা মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়ে। এতে দেশের প্রতি আস্থা কমে যায়, রেমিট্যান্সও প্রভাবিত হয়।
একই কথা বলেন প্রবাসী মিজানুর রহমান, আমরা দেশের উন্নয়ন চাই। কিন্তু যদি প্রতিদিন রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়, জ্বালাও-পোড়াও হয়, তাহলে সেই উন্নয়ন কিভাবে হবে?
বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রবাসীদের আগ্রহও ব্যাপক। নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বহু বছর ধরেই বিদেশে বসবাসরত নাগরিকরা চেয়েছিলেন যেন তারা তাদের সাংবিধানিক অধিকার অর্থাৎ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
দুবাইয়ে অবস্থানরত কামরুল হাসান বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়, এটি আমাদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ।
তারা আশা করছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠিত হবে, যারা দেশ এবং প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করবে।
প্রবাসীরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।
তারা চায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, প্রশাসনের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, সবিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং প্রবাসীদের নানাবিধ সমস্যার সমাধান।
আবুধাবি প্রবাসী আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা কষ্ট করে আয় করি দেশের জন্য। কিন্তু চাই সেই দেশের রাজনীতি যেন এমন হয় যে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি এটাই আমাদের বাংলাদেশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস। এই আয়ের ওপর নির্ভর করেই দেশের আমদানি, বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়। ফলে প্রবাসীদের মানসিক স্বস্তি ও আস্থা ধরে রাখা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নীতি অস্থিতিশীলতা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
দেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবাসীদের চোখ এখন বাংলাদেশের দিকে। তারা আশা করেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ যেখানে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে।
শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশই হবে সেই স্বপ্নের দেশ, যার জন্য কোটি প্রবাসী বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝরাচ্ছেন, পরিবার ও মাতৃভূমির উন্নয়নে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন।