কবিতা-১ঃ শিরোনামহীন
ওগো চপল-নয়না সুন্দরী
তোলো মোর পানে তব দুই আঁখি,
মম শিয়রের কাছে গুঞ্জরি’
গাও সকল অগীত সঙ্গীতে
মোর দেহমন রও ঢাকি
তব স্বপন-আবেশ-হিল্লোলে,
চির- নিত্য-নূতন ভঙ্গীতে
ঢেউ তোলো মোর প্রাণ-সিন্ধুতে,
সুখে উচ্ছসিয়া ওঠে কল্লোলে
ছোটে দুই তট দেশ লঙ্ঘিয়া,
চাহে গ্রাসিতে পূর্ণ ইন্দুকে
মহা আকাশের দ্যায় রঙ্গিয়া
ওগো মোর পিপাসিত যৌবনে
কর শান্ত একটি চুম্বনে।
কবিতা-২ঃ এই শীতে
আমি যদি ম’রে যেতে পারতুম
এই শীতে,
গাছ যেমন ম’রে যায়,
সাপ যেমন ম’রে থাকে
সমস্ত দীর্ঘ শীত ভ’রে।
শীতের শেষে গাছ নতুন হ’য়ে ওঠে,
শিকড় থেকে উর্ধ্বে বেয়ে ওঠে তরুণ প্রাণরস,
ফুটে ওঠে চিক্কণ সবুজ পাতায়-পাতায়
আর অজস্র উদ্ধত ফুলে।
আর সাপ ঝরিয়ে দেয় তার খোলশ,
তার নতুন চামড়া শঙ্খের মতো কাজ-করা;
তার জিহ্বা ছুটে বেরিয়ে আসে আগুনের শিখার মতো,
যে-আগুন ভয় জানে না।
কেননা তারা ম’রে থাকে
সমস্ত দীর্ঘ শীত ভ’রে,
কেননা তারা মরতে জানে।
যদি আমিও ম’রে থাকতে পারতুম—
যদি পারতুম একেবারে শূন্য হ’য়ে যেতে,
ডুবে যেতে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে—
তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে ম’রে যেতে হ’তো না
এই বাঁচার চেষ্টায়,
খুশি হবার, খুশি করার,
ভালো লেখার, ভালোবাসার চেষ্টায়।
কবিতা-০৩ঃ অচেনা মানুষ
(মূলঃ শার্ল বোদলেয়ার। অনুবাদ – বুদ্ধদেব বসু)
বলো আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি
সবচেয়ে ভালবাসো?
তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নীকে?
পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নী- কিছুই নেই আমার।
তোমার বন্ধুরা?
ঐ শব্দের অর্থ আমি কখনোই জানি নি।
তোমার দেশ?
জানি না কোন দ্রাঘিমায় তার অবস্থান।
সৌন্দর্য?
পারতাম বটে তাকে ভালবাসতে- দেবী তিনি অমরা।
কাঞ্চন?
ঘৃণা করি কাঞ্চন, যেমন তোমরা ঘৃণা করো ঈশ্বরকে।
বলো তবে, অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কী ভালবাসো তুমি?
আমি ভালবাসি মেঘ,চলিষ্ণু মেঘ…
উঁচুতে…ঐ উঁচুতে…
আমি ভালবাসি আশ্চর্য মেঘদল।