মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫ ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
বাংলা সংস্কৃতির উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনী-সংক্ষেপ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:১৫ PM আপডেট: ৩০.১২.২০২১ ৪:২৬ PM
সৈয়দ মুজতবা আলী একজন বিংশ শতকী বাঙালি সাহিত্যিক। সৈয়দ মুজতবা আলী আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ভ্রমণকাহিনির জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে যখন ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল, তখন সেই খণ্ডনের সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছিল অনেক কিছুই। কিন্তু যা হারিয়ে যায়নি তা হল অখন্ড ভারতবর্ষের ঐতিহ্যশালী সংস্কৃতি। সাতচল্লিশের দেশভাগের কোপ উপমহাদেশের যে অংশগুলির উপর পড়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো অখন্ড বাংলা প্রদেশ। এই বাংলা প্রদেশ ভেঙে দু টুকরো করে গঠিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ। এই দুই বাংলার ধর্মগত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পার্থক্য থাকলেও পার্থক্য নেই দুই বাংলার সংস্কৃতিতে, সাহিত্যচর্চায় ও মননে। দেশভাগের মতন করুন হৃদয়বিদারক ঘটনাও এই ঐক্যতানে ছেদ ঘটাতে পারেনি। দুই বাংলার স্বতন্ত্র নিজস্ব এই সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চা যাদের হাত ধরে বেঁচে থাকে তারা হলেন এই দুই অঞ্চলের রুচিশীল সংস্কৃতিবান মানুষ। যুগে যুগে বাংলার ভূমিতে এমন মানুষের কোনদিন অভাব ঘটে নি। এদের মধ্যেই কিছু উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বাংলার সংস্কৃতি চর্চার আকাশ আলোকিত করেছেন যুগে যুগে। তেমনি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কগুলির মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী।

সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতবর্ষের অন্তর্গত আসাম প্রদেশে। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত শ্রীহট্ট জেলার করিমগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই শ্রীহট্ট জেলা বর্তমানে সিলেট নামে অধুনা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। সৈয়দ মুজতবা আলী এর পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সাব রেজিস্ট্রারের চাকরি করতেন। এই আলী পরিবারের পৈতৃক নিবাস ছিল হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। সৈয়দ মুজতবা আলীর শিক্ষাজীবন অত্যন্ত বর্ণময়। জীবনের শুরুতে ছেলেবেলায় তিনি তার জন্মস্থান সিলেটেরই একটি গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে নিজের শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এইখানে সৈয়দ মুজতবা আলী নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পিতা সরকারের অধীনস্থ উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে বদলির চাকরি করার কারণে তার এর পরবর্তী শিক্ষাজীবন কেটেছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তৎকালীন সময়ে বিশ্বভারতীর স্নাতক ডিগ্রী দেশের অন্য কোথাও গৃহীত না হওয়ার কারণে সৈয়দ মুজতবা আলী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আই.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ১৯২৯ সাল নাগাদ হুমবোল্ট বৃত্তি নিয়ে জার্মানি গিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী  বার্লিন এবং বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

১৯৩২ সালে দর্শন বিভাগের তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে গবেষণা করে সৈয়দ মুজতবা আলী  লাভ করেন ডি.ফিল ডিগ্রী। সকল প্রকার পড়াশোনার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী এবং মেধাবী সৈয়দ মুস্তাফা আলী এরপর ১৯৩৪ সাল নাগাদ মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শিক্ষা জীবনের মতই সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্মজীবনও ছিল বর্ণময়। সৈয়দ মুজতবা আলী  তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯২৭ সালে বর্তমান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কৃষি বিজ্ঞান কলেজের ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার অধ্যাপক হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে সৈয়দ মুজতবা আলী সেখানকার শিক্ষা দপ্তরের একজন অধিকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য পথিকৃত হিসেবে সৈয়দ মুজতবা আলী একাধারে ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন ঔপন্যাসিক, রম্যরচয়িতা, ছোটগল্পকার, অনুবাদক তথা বহুভাষাবিদ। আপন মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি তিনি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, আরবি, সংস্কৃত, উর্দু ইত্যাদি আরো ১৪ টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। এই কারণেই তিনি অনুবাদক হিসেবে সকল ভাষা সাহিত্যের জন্য বিশেষ অবদান রেখে যেতে পেরেছেন। 

জীবনের মহান কীর্তির জন্য জীবদ্দশায় তথা মৃত্যুর পরেও সৈয়দ মুজতবা আলী বহু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৪৯ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি নরসিংহ দাস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ৬৯ বছর বয়সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে বাংলা সংস্কৃতির উজ্জ্বল এই জ্যোতিষ্কের জীবনাবসান ঘটে। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত