কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা ও গাফলতির কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ সেশনের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১২ তম হওয়ার ঘটনায় সমালোচিত বি ইউনিটের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. শামিমুল ইসলামকে পুনরায় বি ইউনিটের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়েছে।
তাই সংশ্লিষ্টদের মাঝে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে যে, ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞে দায়িত্বের অবহেলা ও গাফলতিতে অভিযুক্ত সেই শিক্ষক পুনরায় কিভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, আসলে যাদের দায়িত্ব অবহেলা ও গাফলতিতে এত বড় ঘটনা ঘটলো, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্কিত হলো তাদের পুনরায় দায়িত্ব দেয়াটা যৌক্তিক মনে করছি না।
জানা যায়, পরীক্ষা না দিয়ে ১২ তম হওয়ার ঘটনা প্রথম ধরা পড়ে প্রবেশপত্র বাছাইয়ের সময়। তখন ওই বিষয়টি বি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক ড. মাসুদা কামাল ও সদস্য-সচিব ড. শামীমুল ইসলামকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তারা উক্ত বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উক্ত পরীক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য আহ্বান করেন।
এ ঘটনায় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এমদাদুল হককে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। তার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় যা যথেষ্ট দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে হয়। এ ঘটনা তদন্তে শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাটে অসতর্কতা ও রুম পরিদর্শকের গাফিলতি যেমন খুঁজে পাই, ঠিক তেমনি তখনকার বি ইউনিট কর্তৃপক্ষেরও গাফিলতি ও উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। বি ইউনিট কমিটিকে প্রবেশপত্র বাছাই কমিটি এ অসংগতির কথা জানানোর পর বি ইউনিট কমিটি যদি টেকনিক্যাল কমিটির সহায়তায় সমস্যাটি তড়িৎ সমাধান করার চেষ্টা করতেন তাহলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে মেধাতালিকায় শিক্ষার্থীর রোল নং কোনভাবেই আসতো না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাহানি হতো না বলে আমরা আমাদের তদন্তে উল্লেখ করেছি।
এ তদন্ত প্রতিবেদন তখন প্রকাশ হলেও পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশ করা হয়নি। শুধু শিক্ষার্থীর ভুল বৃত্ত ভরাটে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রকাশ করা হয়েছিলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের অবহেলার বিষয়টি গোপন রাখা হয়। তদন্ত রিপোর্টটি পূর্ণাঙ্গভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি কেনো জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, কোন অদৃশ্য কারণে তখনকার প্রশাসন আমাদের তদন্ত রিপোর্টটি পূর্ণাঙ্গভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করেন নি।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সেসময় বলেছিলেন, পরীক্ষার হলে যারা দায়িত্বে ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট ডিন অফিসের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দায়িত্বহীনতা ও ভুল ছিল।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত হয়েছে। তবে তার বাস্তবায়ন হয়নি। আমি চাই তদন্তে যে সকল বিষয়ে এসেছে তার বিচার হোক। এতে যদি আমিও দোষী থাকি তাহলে আমি মাথা পেতে নিব। আমি তো প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতির ঊর্ধ্বে না। তদন্ত প্রতিবেদন সাংবাদিকদের দেয়া হোক। তারাই দেখবে কে দোষী আর কে দোষী না
দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষককে পুনরায় 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটিতে আনার ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, উচ্চতর তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন। তদন্তের রিপোর্টও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। ভর্তি পরীক্ষার কমিটিতে কাকে রাখবে না রাখবে সেই সিদ্ধান্ত ও নেয় প্রশাসন। তাই এখানে শিক্ষক সমিতির কিছুই করার নেই।
বি ইউনিটের ২০২১-২০২২ সেশনের আহবায়ক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, যেহেতু উনি একটা অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন আর সে অনুষদ বি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত তাই তিনি এ কমিটির সদস্য। আগেরবার সদস্য সচিব থাকা অবস্থায় যে ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে মনে হয় আমার মন্তব্য করা উচিত না। কারন এটা প্রশাসনিক বিষয়, তাই প্রশাসনেরই দায়িত্ব। উনি কি করেছেন, আর সে অনুযায়ী কি শাস্তির ব্যবস্থা হবে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই জানে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, আমার আসলে এ বিষয়ে তেমন জানা ছিল না। কমিটি গঠনের আগে আমাকে কেউ জানায়ও নি। আমাকে আগে কেউ ইনফর্ম করলে হয়তো সবার সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো।
-বাবু/ফাতেমা