পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা এ আত্মহত্যা। একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। মান-অভিমান, প্রেমে ব্যর্থতা ও পারিবারিক কলহে ঘটছে এ আত্মহত্যা। গত কয়েক মাসের আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। অনেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আবার অনেকে পারিবারিক কলহের কারণে বেঁছে নিচ্ছেন এ আত্মহত্যার পথ।
মঠবাড়িয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে আত্মহত্যা করেছে ২০ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে অধিকাংশই আত্মহত্যা করেছেন গলায় ফাঁস দিয়ে বাকিরা বিষপান, চালের পোকা নিধন ও ঘুমের ট্যাবলেট সেবনে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে এ আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি হলেও জুন মাসে আত্মহত্যার কোন খবর পাওয়া যায়নি।
মঠবাড়িয়া থানা সূত্রে জানাগেছে, ১৭ জানুয়ারী উপজেলার শাখারীকাঠী গ্রামের মিলন জমাদ্দারের মেয়ে মিতু আক্তার (১৬) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ২রা ফেব্রুয়ারি উপজেলার হোগলপাতি গ্রামের মিজান মিয়ার মেয়ে সাথি ওরফে মিম (১৩), ১৬ ফেব্রুয়ারি মিরুখালী গ্রামের দীলিপ সরকারের মেয়ে দোলা সরকার (১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ২রা মার্চ উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের মান্নার স্ত্রী হনুফা বেগম (৪৫) বিষপানে এবং ৮ মার্চ ছোট হারজী গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে মিম আক্তার (১৯) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাছাড়া ১৭ মার্চ তাহের আলী নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ। এছাড়া ২৩ মার্চ মঠবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতে কর্মরত লাইনম্যান আশিকুর রহমান (১৯) শহরের আরামবাগ এলাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। একই দিন উপজেলার হারজী নলবুনিয়া থেকে পলাশ বড়াল (২৮) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। তাছাড়া ২৪ মার্চ আলগীতে গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবতী আত্মহত্যা করেন। ২রা এপ্রিল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন হুমায়ূন কবির হাওলাদারের পুত্র তামিম হাওলাদার (১৮), অপর দিকে ৯এপ্রিল থানা পুলিশ পূর্ব রাজপাড়া থেকে মনির তালুকদারের স্ত্রী নাজমিন (৪৫) এর লাশ উদ্ধার করে। ১১ এপ্রিল গলায় ফাঁস দিয়ে উপজেলার উত্তর মিঠাখালী গ্রামের সেলিম হাওলাদারের মেয়ে সুমি (১৪) আত্মহত্যা করেন। ১৮ এপ্রিল বড় হারজী গ্রামের ওয়াজেদ আলীর মেয়ে মাসুরা আক্তার ওরফে লামিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। ২২ এপ্রিল দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের মৃত এন্দাজউদ্দিন এর ছেলে ফজলুল রহমান চালের পোকা নিধন ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। ২৫ এপ্রিল পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মোল্লার ছেলে হানিফ মোল্লা (৩১) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ১৬ মে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের রিপন মুন্সির ১০ বছরের ছেলে মোঃ সোহাগ মুন্সি, ১৯ মে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে উপজেলার পাতাকাটা গ্রামের খোকন প্যাদার স্ত্রী শারমিন (২৬), ২৪ মে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ধানীসাফা গ্রামের নাসির বেপারীর পুত্র রাকিব বেপারী (২০), ১৬ জুলাই বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন উপজেলার দেবত্র গ্রামের মৃত এরফান উদ্দিনের ছেলে সফিজ উদ্দিন। এছাড়া ২৬ জুলাই অজ্ঞাত কারণে উপজেলার কালিকাবাড়ি থেকে লুৎফা বেগম নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহা.নূরুল ইসলাম বাদল জানান, প্রেমে ব্যর্থ অথবা পারিবারিক কলহের জের ধরেই এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। তিনি আরো জানান, প্রত্যেকটা আত্মহত্যার ঘটনাই থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
-বাবু/ফাতেমা