রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫ ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
শুকুরের হাট ডিগ্রি কলেজর শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:২১ PM
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে  রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরের হাট ডিগ্রি কলেজের পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের ডিজির (মাউশির মহাপরিচালক) প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ এর বিরুদ্ধে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়,  ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এসআরও (এসআরও-সংবিধিবদ্ধ নিয়ম ও আদেশ) জারির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব খর্ব করা হয় । এই নির্দেশ লঙ্ঘন করে মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরের হাট ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক পদের ওই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতির নেওয়া হচ্ছিল সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ । এদিকে গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে নিয়োগ বোর্ডের প্রধান সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হন।

 বিধি বর্হিভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ’র কাছে বিধি মোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এদিকে গতকাল বুধবার ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে স্নাতক পাস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা। এ কারণে প্রশাসন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা ছিল। অথচ আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে গোপনে অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ ওই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করার ঘটনায় অভিভাবক ও সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।

পরীক্ষা চলাকালনি সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক অসিউজ্জামান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. মো. আরিফুর রহমান, দর্শন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তাসনিম নাজিরা রিদা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।  উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এসআরও (এসআরও-সংবিধিবদ্ধ নিয়ম ও আদেশ) জারির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব খর্ব করা হয়। ওই তারিখের পর থেকে কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না। এর পর থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিবে বলে নির্দেশ জারি করে। এমন সরকারি বিধি নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অতি গোপনে পুর্বের দিন ও তারিখ দেখিয়ে মিঠাপুকুরের শুকুরেরহাট কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন। আর এতে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে সকল আয়োজন সম্পন্ন করাসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া জায়েজ করার দায়িত্ব নেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ। উক্ত নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একজন প্রতিনিধি (বিষয় বিশেষজ্ঞ), কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি,  গভর্নিং বডির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ।  

একটি নির্ভরযোগ্য গোপন সুত্রে জানা যায়, একটি পত্রিকায় গোপনে মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরের হাট ডিগ্রি কলেজে ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামে ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সংক্রান্ত এসআরও (সংবিধিবদ্ধ নিয়ম ও আদেশ) জারি করে। যাতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের ইচ্ছে মত অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে না পারে। এ কারনে এনটিআরসিএ মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নিয়োগদানের ক্ষমতা খর্ব হয়ে পড়ে। কিন্তু এত কিছুর পরেও শুকুরের হাট কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ’র পরামর্শে অতি গোপনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা না নিয়ে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে ওই পরীক্ষার আয়োজন করেন। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ বলেন, বৈধ্যভাবেই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার কাছে বিষয়গুলো গোপন করেন। যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলো। এসব কারণে পরীক্ষা পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে।

বৈধভাবে পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তাসনিম নাজিরা রিদা বলেন, ‘আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি পরিস্থিতি ভিন্ন। নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে আছি। বিস্তারিত জানতে হলে সরাসরি এসে কথা বলেন।’ শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন বলেন, নিয়োগ কার্যক্রম চলার সময় সাংবাদিকরা হঠাৎ করে সেখানে হাজির হন। এমন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়োগ কার্যক্রম ভন্ডুল হয়। নিয়োগ বাতিল হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম মন্ডল এ প্রতিবেদককে বলেন, নিয়োগের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো অধ্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মনোনীত করলে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।  

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মতিন লষ্কর বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে কোন এমপিও ভুক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না। তবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও শিক্ষকদের কলেজের নিজ অর্তায়নে বেতন দিতে পারবেন। এখন কি উদ্দেশ্য নিয়ে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল তা আমার জানা নেই। তবে জেলা অতিরিক্তি জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) দপ্তর থেকে আমাকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি জানানো হয়। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাবু/জাহিদ
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত