ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। প্রতিবেশী চাচা ফরহাদ হোসেন (৫৩) ও তার ছেলে জামিউল আলীম জীবনকে (২০) মারপিট করে গুরুতর আহত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ও অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আহত জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। আহত পিতা-পুত্রকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত জামিউল আলীম জীবনকে মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে সোমবার রাতে উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে। আহত ফরহাদ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে, আর জামিউল আলীম জীবন ফরহাদ হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শনিবার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারের জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভিতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে চুরির সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান সালিশ বৈঠক বসিয়ে সন্দেহ ভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে জোড়পূর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবী করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়। এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জামিউল আলিম জীবন আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন তাকে ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে তার সাথে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং জীবনকে কিলঘুষিসহ মারপিট করতে থাকে। খবর পেয়ে তার বাবা ফরহাদ হোসেন ছেলেকে ছাড়াতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিট করতে থাকেন চেয়ারম্যান। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। এতে ফরহাদ হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এসময় স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এবং আহত জামিউল আলীম জীবনকে মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে জীবনকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম ফকরুদ্দিন জানান, তার ভাই ফরহাদ হোসেনের মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। আর ভাতিজা জামিউল আলিম জীবনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে, এবং লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ভাই ফরহাদ হোসেনকে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায় ভাবে তার ভাই ও ভাতিজাকে বেদম মারপিট করেছে। এই ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন।
নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আর এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে আহত জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ তার ছোট দুই ভাই ও অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।
এসব ব্যাপারে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জীবন ও তার বাবা নেশাখোর। জীবন তার বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে বিষোদাগার করেছেন। তাকে ডেকে এনে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জীবনের পিতা ফরহাদ হোসেন পিছন থেকে চেয়ারম্যানকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। এমন সময় আত্মরক্ষা করতে পালটা মারদেওয়া স্বাভাবিক বিষয়। তবে তারা বেশি অসুস্থ্যতার নাটক করছেন বলে, চেয়ারম্যান দাবী করেন।
বাবু/জাহিদ