পূজা মণ্ডপে ঢুকার সাথে সাথেই কানে আসে সাউন্ড সিস্টেমে পদ্মা সেতুর আয়তন, ব্যয়সহ এই প্রকল্প নির্মাণের পেছনের গল্প। বাংলাদেশের বিশেষ আলোচিত বেশ কয়েকটি উন্নয়নের প্রকল্পের আদলে নির্মিত প্রতিচ্ছবি। সংসদ ভবন, মেট্টো রেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমানবিক কেন্দ্র, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মডেল মসজিদের নকশা স্থান পেয়েছে মন্ডপজুড়ে। যেন ছোট্ট পরিসরে এক টুকরো স্বপ্নের বাংলাদেশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পৌরশহরের রাধানগরে বিদ্যালয় চত্বরে ব্যতিক্রম স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে ব্যতিক্রম এ পূজা মণ্ডপ তৈরী করেছে অরুণ সংঘ নামের একটি সংগঠন। ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ নামের এ থিম মন্ডপটি নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের।
শিল্পীর নিখুঁত কারুকাজ আর রং তুলির আঁচরে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এক একটি শিল্পকর্ম। দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণের সামনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বড় উন্নয়ন কর্মকান্ডকে তুলে ধরা এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোয় সংগঠনটির উদ্দেশ্য। দুই দিনব্যপী পুজা অনুষ্ঠানে থাকছে ধর্মীয় আলোচনা, ব্রাহ্মণসংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরস্বতী পষ্পাঞ্জলি দিয়ে শুরু হয়েছে পুজার আনুষ্ঠানিকতা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের গেটে পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০০ ফুট লম্বা পদ্মা সেতুর নমুনা। সম্পূর্ণ ককশীট দিয়ে সেতুর অবিকল নকশা নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর ভেতরে রয়েছে ট্রেন। শ্রমিকরা শেষ মুহুতের্র সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত। বিদ্যালয়ের ভেতরে একপাশে মেট্টো রেল, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের আদলে কয়েকটি ঘর। বঙ্গবন্ধু টানেল, রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্র। একপাশে সংসদ ভবন। সংসদ ভবনেই হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজা মণ্ডপ হলেও এখানেও শোভা পাচ্ছে রয়েছে মডেল মসজিদের একটি নমুনা। শিল্পীরা ককশীট, রং আর অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে প্রতিটি নকশা ফুটিয়ে তুলছেন নিখুঁতভাবে। দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কড়েছে ব্যত্রিক্রম এ পূজা মণ্ডপ। বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক পলক চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন পথচারীরা। পুরো এলাকায় উৎসবের আবহ বিরাজ করছে। নানা বয়সী মানুষ ঘুরে ঘুরে দেখছে এসব শিল্পকর্ম। আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে অরুন সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত স্বরসতী পূজার আয়োজন করে সংগঠনটি প্রথম দিকে ছোট্ট পরিসরে পূজার আয়োজন করা হলেও। বিগত ৬/৭ বছর ধরে থিম পূজার আয়োজন করা হয়। একেক বছর একেকটি ভিন্ন থিম প্রদর্শণ করা হয়। গত বছর পূজার থিম ছিল পাঠাগার। পাঠাগারের মতো করে বইয়ের আকৃতি দিয়ে সাজানো মণ্ডপটি ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়ায়।
কথা হয়, পূজা মণ্ডপের কারিগর শিল্পী শাহাদাত হোসেনের সাথে। তার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম। ছোট বেলা থেকেই ড্র্ইং পেইন্টিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। তিনি নিজে নিজেই এসব শিখেছেন। তিনি বলেন, গত ১ মাস ধরে ২ জন শ্রমিক নিয়ে নকশা তৈরিতে কাজ করছেন। তবে এক সপ্তাহ ধরে ৭ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করছে। অরুণ সংঘের সভাপতি সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, আমরা সংসদ ভবন, মেট্টো রেল, পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের অবয়ব তৈরি করে পূজা মণ্ডপ গড়েছে। এখানে এলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবে দর্শনার্থীরা। পূজার ধর্মীয় রীতি স্বাভাবিক রেখে মানুষের সামনে ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করাই আমাদের এ থিম পূজার আয়োজন। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে এটাই আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
বাবু/জেএম