শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
ক্যান্সার প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন
সৈয়দ হুমায়ুন কবীর
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৪ PM আপডেট: ০৩.০২.২০২৩ ৭:২৮ PM
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ৪ ফেব্রুয়ারি। সারাদেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ৪ ফেব্রুয়ারি ‘ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ’ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ক্যান্সার সচেতনতা ও ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো কাজ করবে সংস্থাটি। দিবসটি উপলক্ষ্য সচেতনতা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।  

আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কীভাবে মানুষের ভেতরে এই ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগ সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরি করা যায়। সেজন্য আমরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ক্যান্সার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছি সারা বছরব্যাপী। চেষ্টা করি মানুষের ভেতরে গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে ঔষধের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়। শারীরিক পরিশ্রম, মানসম্মত খাদ্যাভ্যাস, ভেজাল রং মিশ্রিত খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাজাপোড়া জাঙ্কফুট  বন্ধ করে, দেশীয় ফলমূল শাকসবজি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে, কীভাবে রুখে দাঁড়ানো যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি সাধারণ মানুষের ভেতরে তৈরি করছি গণসচেতনতা। আমরা তামাক ও নিম্নমানের মশার কয়েল, গাড়ির কালো ধোঁয়া, প্লাস্টিক পোড়ানো, যেখানে সেখানে পলিথিন পোড়ানো, রাস্তায় পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা, ইলেকট্রিক বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, মোবাইল রেডিয়েশন-এসব বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করে যাচ্ছি।

আমাদের নারী, মা-বোনদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত সেনেটারি ন্যাপকিন ফ্রি দিচ্ছি। তাদেরকে সচেতন করছি জরায়ু ক্যান্সার ও বেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে। বাল্যবিবাহ যাতে না দেওয়া হয়। বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা তুলে ধরছি। জরায়ু ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য তাদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছি। সমুদ্র তীরবর্তী অসহায় গরীব নারীদের আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সমুদ্রের লোনা পানি থেকে সুপেয় পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। উপকূলীয় মায়েরা তাদের নিজেদের জরায়ুকে কিভাবে সেইভ রাখতে পারেন সেগুলো নিয়েও কাজ করছি আমরা। কীভাবে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে মানসম্পূর্ণ খাদ্য উৎপাদন তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি কৃষকদের। আমরা কাজ করছি ট্যানারি বর্জ্যের বিরুদ্ধে যে বর্জ্য দিয়ে যে ক্ষতিকর পোল্ট্রি ফিল্ডে খাবার এবং মাছকে খাবার দেওয়া হয়। যা ক্যান্সারের জন্য মারাত্মক হুমকি। আমরা বুঝানোর চেষ্টা করি পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসায়ীদের এবং মৎস্য চাষি, ব্যবসায়ীদেরকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি।

বিশ্বব্যাপী ৪ ফেব্রুয়ারি কেন পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস: এই দিনটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়, যা আগে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দু’হাজার সদস্য রয়েছে। দিবসটি  উদযাপনের উদ্দেশ্য হল মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই কর্কট রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। ক্যান্সার একটি বড় রোগ, যার সময়মত চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রতিবছর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। বিশেষ করে সাড়ে ১০ কোটি মহিলা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দ্বিতীয় এ মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বাংলাদেশে ক্যান্সার ও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি নারী।বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান। নানাবিধ কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। আমাদের জীবনাচরণে এবং খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সেটি একটি কারণ। এছাড়া কারো পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে হতে পারে। 

গবেষণায় দেখা যায়, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন বা হরমোনের ইনজেকশন নিচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। একই সঙ্গে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকে না। 

ক্যান্সার কথাটি শোনামাত্র মানুষের মনে সৃষ্টি হয় এক বিভীষিকার। মহিলাদের কাছে তেমনি এক বিভীষিকার নাম স্তন ক্যান্সার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকায় প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন মৃত্যুবরণ করেন। স্তন ক্যান্সারের এ পরিসংখ্যান খুবই আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান হয়নি, তাই স্তন ক্যান্সারের সঠিক হার জানা যায়নি। তবে এ হার যে খুব কম নয় তা বলা বাহুল।

চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনও অঙ্গ বা টিস্যুতে হয়েছে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে রোগীর কাউন্সেলিং জরুরি। রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার চেয়ে রোগ যাতে শরীরে বাসা বাধতে না পারে তা নিশ্চিত করা আরও জরুরি।


লেখক : সভাপতি, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ 

বাবু/জেএম

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  ক্যান্সার   প্রতিরোধ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত