কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস'র) আয়োজনে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সখিপুরের হাতীবান্ধা ইউনিয়নের তালিমঘরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ তম ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এর মাধ্যমে সখীপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রায় তিন হাজার রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ও বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও রোগীদের চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিনব্যাপী রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেন।
আজ সকালে তালিম ঘরে ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন হায়দার।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাম্পসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা: এম এ সামাদ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাসাইল সখীপুর টাঙ্গাইল ০৮ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযুদ্ধা এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি। বরেণ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মনছুরুল আলম হীরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: এখলাছুর রহমান, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে উপসচিব মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আমিনুল এহসান কবীর।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সখিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রকৌশলী ফারজানা আলম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: রুহুল আমিন মুকুল, সখীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম।
সবার জন্য কিডনী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস'র প্রতিষ্ঠাতা ও আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: এম এ সামাদ। তিনি বলেন, এক সময় ছিল যখন কলেরা কালাজ্বর গুটিবসন্ত প্লেগ ম্যালেরিয়া ইত্যাদির সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বেশিরভাগ মানুষের অকাল মৃত্যু হতো। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। বর্তমানের চিত্র বদলে গেছে। এখন প্রতিবছর প্রায় পাঁচ কোটি মৃত্যুর মধ্যে চারকোটি মৃত্যু ঘটে অসংক্রামক ব্যাধিতে। আমাদের মতন ইন অথবা মধ্যম আয়ের দেশে প্রায় ৭০ ভাগ মৃত্যু ঘটে এই অসংক্রামক রোগের। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে এক বছরের যত মৃত্যু হয় তার ৫০ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে কোন না কোনভাবে কিডনি রোগ সম্পৃক্ত আছে। আমরা জানি কোবিড-১৯ মহামারীতে যত মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তার চেয়ে বেশি লোক মারা গেছে হূদরোগ কিডনি বিকল ক্যান্সারসহ অনেক চিকিৎসাযোগ্য সংক্রামক ব্যাধিতে লকডাউন যানবাহন সময়মতো চিকিৎসকের অভাবে। দেশে কোন মহামারী বা দুর্যোগ দেখা দিলে কিডনি রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়ে আমরা জানি কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ডায়ালাইসিস কিডনি সংযোজন। ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে দুই দিন করতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে। কিডনি সংযোজনের রোগীদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। ঔষধ নিয়মিত না খেলে সংযোজিত কিডনি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তেমনি অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা সাময়িক বন্ধ থাকলে জটিল আকার ধারণ করে অকাল মৃত্যু হতে পারে।
সবার জন্য কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস'র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাক্তার হারিসুল হক এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ক্যাম্পস'র নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন।
-বাবু/এ.এস