ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীনিবাসে আবারও ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কক্ষে আসন দেওয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতির হাতে এক ছাত্রী মারধরের শিকার হয়েছেন।
নির্যাতনের এ ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গেলে অন্য ছাত্রীদেরও নানা হুমকি-ধমকি দেন ছাত্রলীগের ওই নেত্রী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহিদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছাত্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মহুয়া আক্তার। তাকে মারধরে অভিযুক্ত নেত্রী হলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রোকসানা আক্তার।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘রোকসানা হলে সিট বাণিজ্য করেন। তিনি বাইরের মেয়েদের টাকার বিনিময়ে হলে রাখেন। তিনি এক রুমে ২০ জন করে মেয়ে রাখেন। তিনি টাকা নিয়ে আমাদের হলে তুললেও এখন পর্যন্ত সিট দেননি। বরং আমাদের দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত কাজ করান। তার জুতা পর্যন্ত পরিস্কার করান। তার কাজ করতে রাজি না হলে তিনি ছাত্রীদের বাজে ভাষায় গালিগালাজ করেন।’
নির্যাতনের ঘটনার একটি লিখিত বিবরণে পঞ্চম তলার ছাত্রীদের একটি অংশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পঞ্চম তলায় ছাত্রলীগ নেত্রী রোকসানা আক্তার সাধারণ ছাত্রী মহুয়াকে নির্যাতন শুরু করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের কক্ষে থাকা ছাত্রীরা এগিয়ে এসে জানতে পারেন যে মহুয়াকে মারধর করছেন রোকসানা।
ছাত্রীনিবাসের একাধিক ছাত্রী বলেন, রোকসানাকে এককালীন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি কক্ষে উঠেন মহুয়া। এক বছর ধরে তিনি ওই কক্ষে মেঝেতে থাকছেন (ফ্লোরিং)। সম্প্রতি একজনকে ওই কক্ষে আসনের (বেড) ব্যবস্থা করে দেন রোকসানা। মহুয়া প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়।
বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে রোকসানা মহুয়ার ওপর খেপে যান। প্রথমে তিনি মহুয়াকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পেটান। এর পর কক্ষে থাকা বঁটি নিয়ে মহুয়াকে ধাওয়া করেন। এ সময় কক্ষের বাইরে থাকা অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে মহুয়াকে মারধর করেন রোকসানা। পরে অন্য ছাত্রী ও হল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বঙ্গমাতা ছাত্রীনিবাসের সুপার নাজমুন নাহার অবশ্য দাবি করেছেন, রোকসানা ও মহুয়ার মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। তবে পরে সমাধান হয়ে গেছে। তিনি বুধবার রাতে বলেন, ‘রোকসানা ও মহুয়া একই কক্ষে থাকেন। গত মঙ্গলবার তাদের দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। আমরা গিয়ে দেখি, দুজনই দুজনকে আঘাত করেছেন। কোনো সিম্পল ব্যাপারে হয়তো এটা হয়েছে। ঘটনার পরে তারা নিজেরাই বিষয়টি সমাধান করেন। এ ঘটনায় কোনো ছাত্রী অভিযোগ দেননি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেত্রী রোকসানা আক্তার বুধবার রাত ১০টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, তিনি বাইরে আছেন। এর ১০-১৫ মিনিট পরে কথা বলতে পারবেন। পরে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া মেলেনি।
বাবু/এ আর