বাসে ওঠা আর গাছে ওঠার মধ্যে পার্থক্য নেই। প্রতিদিন যেভাবে- ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি করে জীবনের মায়া ভুলে, বাদড়ের মতো ঝুলে ঝুলে বাসে করে অফিসে যাতায়াত করতে হয়। তখন মনে হয় বাসে না, যেন গাছে উঠছি। ছোটবেলায় ঠেলাঠেলি করে আমগাছ, জামগাছ ও কাঁঠাল গাছে উঠতাম। অনেক সময় গাছের সঙ্গে জোরাজোরি করে উঠতে গিয়ে হাত-পা ছিঁলে যেত, পরে সেই ক্ষতস্থানে ব্যথায় ভীষণ জ্বলে পুড়ে যেত। আবার গাছ থেকে পড়ে অনেকের হাত পা ভেঙেও গেছে।
প্রতিদিন নগরীতে যারা গণপরিবহন বাসে যাতায়াত করেন শুধু তারাই বলতে পারবেন, বাসা ওঠা আর গাছে ওঠার অনুভূতি একই, কোন প্রার্থক্য নেই! শুধু ঢাকা নগরী না, দেশের সব জায়গায় গণপরিবহনে হযবরল অবস্থা। এক কথাই বলা যায়, গণপরিবহন খাতে চলছে চরম নৈরাজ্য। গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমতো জোরপূর্বক সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেন। এ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়া, হাতাহাতি এমনকি মারামারির ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। এছাড়া ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা তো আছেই। দেশের সড়কগুলোতে সবচেয়ে বড় মস্তান গণপরিবহন শ্রমিকরা। তারা কোন আইন-কানুন তোয়াক্কাই করে না।
রাজধানীসহ সারাদেশে যানজটের অন্যতম একটি কারণ গণপরিবহন শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা। বাসের শ্রমিকের কাছে যাত্রীদের সময়ের কোনো মূল্যই নেই। তারা তাদের খেয়ালখুশিমতো এমনভাবে ক্রসিংয়ে বা মোড়ে বা রাস্তার মাঝখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করে, যাতে করে পেছনের কোনো যানবাহন তাকে অতিক্রম করতে না পারে। ফলে সবুজ সিগন্যাল থাকা সত্ত্বেও যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রাজধানীতে যারা নিয়মিত চলাচল করেন, তাদের কাছে এসব হয়রানি গা-সওয়া গেছে। এ ছাড়া এই অব্যবস্থা থেকে কিছুতেই পরিত্রাণ নেই।
এদিকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে গণপরিবহন। নিয়ম-কানুন না-মানা গণপরিবহনে প্রতিদিন ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কেই ঝরে যাচ্ছে অজস্র তাজাপ্রাণ, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেই।
এমনাবস্থায়, গণপরিবহন খাতের চরম নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা নামের অভিশাপ থেকে আমরা কি কখনোই মুক্তি পাব না। এদেশের গণপরিবহন কি জনবান্ধব হবে না?
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট