চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরায় অবস্থিত ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের তুলার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
এ ঘটনায় সকাল আটটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ফায়ার সার্ভিসের টিম আরও কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর আরো নিশ্চিত হয়ে তারপর আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি জানান সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল।
এর আগে শনিবার ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড, কুমিরাসহ ৯টি ইউনিট দিনভর চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারেনি।
পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে চট্টগ্রামের ডিসির নির্দেশেনায় সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনীর ফাইটার টিম, বিজিবিসহ ২৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন আশেপাশের অন্য ডিপোতে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তিন বাহিনীর প্রশিক্ষিত দল সারারাত সতর্কতার সাথে কাজ শেষ করেছে। সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদের নেতৃত্বে একটি ফায়ার ফাইটিং দল কাজ শুরু করেছিল।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে ছোট কুমিরার হিঙ্গিপাড়ায় ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের গোডাউনে মেরামতের কাজ চলাকালে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে তুলার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট দিনভর কাজ করলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে করতে পারেনি। তবে পানি সংকটের কারণে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বাহিনীর সহায়তা চান। পরে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ প্রশিক্ষিত বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাতভর কাজ করে সকাল আটটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে, সকালেও বিভিন্ন তুলো গাইড থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। তখনও ফায়ার কর্মীরা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেননি। আরও কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ধোঁয়া বন্ধ হয়।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল জানান, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সমন্বয়ে রাতভর চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে সকালে আটটার দিকেও তুলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। আমরা আরো পর্যবেক্ষণ করেছি। তবে আগুন আর বাড়েনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, রাত ৩টার দিকে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। আজ রবিবার সকাল এগারোটায় আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে কিছু তুলার গাইড থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিস তখনও আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করতে পারেনি। আরও কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। এদিকে ঘটনার কারণ জানতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে কারখানাটির দায়িত্বশীল কাউকে খুঁজে পাওয়া যাইনি। এ কারখানাটিতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে কারো বক্তব্য পাওয়া যাইনি। এ বিষয়ে জানতে কারখানার দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানকে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
রোববার জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, শনিবার সকালে ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের গুদামে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলাকালে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর পরপরই মুহুর্তে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় তিনি ঘটনাস্থলে এসে আগুনের তীব্রতা এবং পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ফাইটার দল ও নৌ-বাহিনী এবং বিজিবির সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, তুলার গুদামে আমদানি করা তুলা ছিল ২ হাজার ৭০০ টন। এগুলো দাহ্য হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়েছিল।
বাবু/ এনবি