চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে কারখানাটির পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে নগরীর মুরাদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ। আজ বুধবার তাকে আদালতে তোলা হয়েছে। হতাহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সান্টুর একদিনের রিমান্ড মন্জুর করেছে আদালত।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম কামরুন নাহার রুমীর আদালতে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আদালত পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিল্প পুলিশ-৩ এর পরিদর্শক মোহাম্মদ শামশুদ্দীন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিল্পপতি সান্টুর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক তাঁর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী কদমরসুল (কেশবপুর) এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৭ শ্রমিক নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।
এ দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের চাপে মালিকপক্ষ শ্রম আইনে প্রত্যেক শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন সীমা গ্রুপ। গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সীতাকুণ্ড উপজেলা কার্যালয়ে প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো শ্রমিককে ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের ২ লাখ টাকা করে দেন।
এসময় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ কামাল, ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া নিহতদের পরিবারের কেউ উপযুক্ত হলে তাদের চাকরিরও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
এদিকে হতাহতের পরিবারকে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েও সীমা গ্রুপের পরিচালক সান্টুকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। শিল্প উদ্যোক্তা সান্টুর গ্রেফতারের ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এরপর আজ সান্টুকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় তার কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এমন দৃশ্যের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের নেতা ও সাংবাদিকদের নেতৃবৃন্দরা নানা মন্তব্য করতে দেখা যায়।
সান্টু একজন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার ক্ষেত্রে এভাবে দড়ি বেধে টেনে নিয়ে যাওয়া অসম্মানজনক বলে মনে করে বিশিষ্টজনেরা। সীতাকুণ্ডের বিশিষ্ট সংগঠক ও সমাজসেবক লায়ন মো. গিয়াস উদ্দিন লিখেছেন, বি এম কন্টেইনার ডিপো ভাসুর নাম নেয়া পাপ ! আর সীমা গ্রুপে সীতাকুণ্ডের লোকজন চাকুরি করে ৯০% তাই ধর-কোমরে রশি বেঁধে পারভেজ সান্টুকে।
সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক ফোরকান আবু লিখেছেন, সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ ক্যামিকেল কন্টেইনার বিস্ফোরনের ঘটনায় ৫১ জন মানুষ নিহত হয়, অথচ মালিকের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।
সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক এম. সেকান্দার হোসাইন লিখেছেন, ইনি সীমা গ্রুপের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টু। গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন তার অবস্থা দেখুন। অপরাধ কী? তার কারখানায় বিষ্ফোরণ হয়েছে। বিষ্ফোরণ- দুর্ঘটনা কী আর কোথাও হয় না? প্রতিদিন মহাসড়কে দুর্ঘটনা হয় না? উনি তো চুরি করেননি। কোন খুনও করেননি। ব্যক্তিগতভাবে কোনদিন উনার সাথে আমার কথা হয়নি। শুধু নামটা জানি। আমরাও দুর্ঘটনার নিউজ করেছি। তারা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। এরপরও তিনি গ্রেপ্তার হলেন। এখন দেখছি কোমরে দড়ি দিয়ে টেনে নেওয়া হচ্ছে!!! দৃশ্যটা মোটেও ভালো লাগেনি। সকল শিল্পপতিকে বলব হয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করুন না হয় এরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন। ছিঃ এ কেমন আচরণ?
সাংবাদিক কামরুল ইসলাম দুলু লিখেছেন, যার কারখানায় কাজ করে ৯০% স্থানীয় মানুষ, করোনার সময় যিনি আক্রান্ত মানুষের জন্যে অক্সিজেন ফ্রি করে দিয়েছিলেন, দুর্ঘটনায় আহত- নিহতের জন্যে যিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, দুর্ঘটানার এক সাপ্তাহের আগেই যিনি শ্রম আইনের নিয়মের বেশী ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন তার কোমড়ে জুটলো রশি। বিস্ফোরণের পর আমিও অন্য সংবাদকর্মীর মতো একাদিক করেছি তাই বলে এমন নির্মমতা কখনও সমর্থন যোগ্য নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জনিয়েছেন, ছবিটি দেখে জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম স্যার নিজেও মর্মাহত হয়েছেন এবং সাথে সাথে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মহোদয়কে ফোন দিয়ে যে বা যারা এই অপকর্মটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশ সুপার মহোদয় জানিয়েছেন- দুই/একজন অতি উৎসাহী হয়ে কাজটি করেছে এবং ইতোমধ্যে তাদেরকে শো-কজ করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, তাহলে কেন বিএম ডিপোতে শত শত শ্রমিক আহত ও নিহতের ঘটনায় মালিকপক্ষ এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে? সীতাকুণ্ডে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র....?
বাবু/জেএম