বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ ও বাঙালির নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত শোষিত মানুষের নেতা। তাই তো ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সের ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ সম্মেলনে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ট্রো উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর তিনি তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘এতদিন ভেবেছিলাম আমিই বুঝি অনিরাপদ, আজ থেকে তুমিও অনিরাপদের কাতারে চলে এলে। আজ থেকে বুলেট তোমাকে তাড়া করবে।’ বঙ্গবন্ধু জানতেন তাঁর পরিণতি কী হতে পারে। কিন্তু যারা মানুষের জন্য কাজ করেন, মানুষ নিয়ে ভাবেন নিজের জীবন, নিজের পরিবার নিয়ে ভাবার সময় তাঁদেও কোথায়? তিনি গরিব মানুষ, নিপীড়িত মানুষ, শোষিত মানুষ নিয়ে ভাবতেন, তাদের অভাব, অভিযোগ, অধিকার অনুভব করতেন। বিপদের কথা তিনি যে আঁচ করতে পারেননি, তা নয়, পেরেছিলেন। আর পেরেছিলেন বলেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমার পরিণতি যদি চিলির আলেন্দের মতো হয়, তবুও আমি সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করব না।’সালভেদর আলেন্দে ছিলেন চিলির সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট, জাতীয়তাবাদী নেতা। আমেরিকার তা সহ্য হচ্ছিল না। তাই ১৯৭৩ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশেও আমেরিকার পরোক্ষ মদদে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু যে বিশ্বমানের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোই তার প্রমাণ। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর তাঁর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (World Documentary Heritage) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে বিশ্ব নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করে। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণটি বিপ্লবের মাইল ফলক। এ ভাষণ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষকে বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের পথপ্রদর্শক, জাতিসংঘের পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধু মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ( International Tribunal Act, 1973) প্রণয়ন করেন। আর জাতিসংঘ সে আইন প্রণয়ন করে ১৯৯৮ সালে। বঙ্গবন্ধু সমুদ্র আইন করেন ১৯৭৪ সালে (The Territorial Waters And Meritime Zones Act, 1974)। জাতিসংঘ সমুদ্র আইন করে ১৯৮২ সালে। বঙ্গবন্ধু সমুদ্র আইনে ছিল এবং আছে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সীমা, আর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সীমা। জাতিসংঘ তা স্বীকার করে নিয়ে আইন করল যে, কোন দেশের সমুদ্র উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সে দেশের রাজনৈতিক সীমা, আর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সীমা।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের যে সংবিধান প্রণয়ন করেন তা ছিল বিশ্বমানের সংবিধান, উদার, অসাম্প্রদায়িক সংবিধান যার মূলনীতি ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। সকল জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণের মানুষকে সমান চোখে দেখা গণতন্ত্রের মূলকথা, সেটা ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যতীত কী করে সম্ভব? আর সম্ভব নয় বলেই বঙ্গবন্ধু সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করেন। কাজটি যদিও কঠিন ছিল। কেননা পাকিস্তান রাষ্টটি ছিল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র এবং সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতেই তার সৃষ্টি। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সৃষ্টি করা মহা কঠিন কাজ। কেননা নেশামুক্ত মানুষকে নেশাযুক্ত করা সহজ, কিন্তু নেশাযুক্ত মানুষকে নেশামুক্ত করা কঠিন। সে কঠিন কাজের দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রণয়ন করেন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় তিনি কত বড় গণতান্ত্রিক মানসিকতা ধারণ করতেন। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারপরেও তিনি ৭ মার্চের ভাষণে বলেন, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও তা মেনে নেব।’সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে অন্যায্য কিছু করা গণতন্ত্র নয়। এ বোধ তাঁকে বিশ্বনেতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।
বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ‘রাজনীতির কবি’ (Poet of Politics)। তাঁকে এ অভিধা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নিউজউইক ম্যাগাজিন, ৫ এপ্রিল ১৯৭১। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ‘স্বাধীনতা’গল্পে বঙ্গবন্ধুকে কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তাঁর ঐ কবিতায় আছে, ‘প্রতীক্ষা মানুষের: কখন আসবে কবি? কখন আসবে কবি।’ বঙ্গবন্ধু ব্যতীত পৃথিবীর আর কোন রাজনৈতিক নেতাকে রাজনীতির কবি অভিধা দেওয়া হয়েছে বা রাজনীতির কবি বলা হয় জানা যায়নি। তিনি শুধু রাজনীতির কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন এবং জনগণকে স্বপ্ন দেখাতেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রকৃতির বরপুত্র। তাঁর দেহাকৃতি, চেহারা-সুরত, কণ্ঠস্বর, কথা বলার বাচনভঙ্গি, বক্তৃতা সবই ছিল যুগান্তকারী, বিশ্বমানের। তিনি বিশ্বের যেখানেই যেতেন সেখানেই তিনি হতেন মধ্যমণি। তিনি ছিলেন মুকুটবিহীন সম্রাট। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে লন্ডন পাঠিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডন পৌঁছেন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ লন্ডনে ছিলেন না। তিনি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করে সমস্ত প্রটোকল ভেঙে বঙ্গন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন এবং নজিরবিহীন সম্মান দেখান। বঙ্গবন্ধুকে দেশে ফিরতে রাজকীয় কমোট বিমানের ব্যবস্থা করে দেন। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমান যখন দিল্লির পালাম বন্দরে অবতরণ করলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভিগিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানান। ২১ বার তোপধ্বনি বাজিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এসব অনার বঙ্গবন্ধু পান একজন সিভিলিয়ান হিসেবে। কেননা তখনও তিনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি।
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ছয়টি (আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, মান্দারিন, রুশ, স্প্যানিশ)। সেখানে তিনি এ ছয় ভাষার কোনো ভাষাতেই ভাষণ দেননি। তিনি ভাষণ দিলেন বাংলায়। তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদী ছয় ভাষার বাইরে সকল ভাষারই যে গুরুত্ব আছে তা বুঝিয়ে দেন। এর আগে তিনি ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বশান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে চীনে গমন করেন। সে সম্মেলনেও তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। তিনি যখনই সুযোগ পেতেন বিশ্বে বাংলাকে তুলে ধরতেন।
মিত্রতার নামে বা যুদ্ধের নামে এক দেশের সৈন্য অন্য দেশে ঢুকে পড়লে তার আর বের হয় না। ১৯৪৫ সাল থেকে মার্কিন সৈন্য জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছে, বিদায় নেয়নি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং তাদের কাছেই পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পন করে। কেননা মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের প্রধান ছিলেন জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। বঙ্গবন্ধু মাত্র দুই মাস বারো দিনের মাথায় ভারতীয় বাহিনীকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করাতে সক্ষম হন। এটা ছিল অকল্পনীয়, অথচ বঙ্গবন্ধু তা বাস্তবে রূপ দিলেন বিনাযুদ্ধে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তিবাদী নেতা। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ছিল Friendship to all and malice towards none (সকলের সাথে বন্ধুত্ব এবং কারো সাথে বৈরিতা নয়), যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি। এটা হল বিশ্বমানবতার নীতি। যিনি বিশ্বমানবতা ধারণ করেন তিনিই হন বিশ্বনেতা। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির উক্ত উক্তি জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে সন্নিবেশিত হয়েছে। ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত ‘International Year of Dialogue as a Guarantee of Peace, 2023’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনের ১৪তম প্যারায় এ উক্তি সন্নিবেশিত হয়। (৭ ডিসেম্বর ২০২২, দৈনিক ইত্তেফাক)।
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাই ছিল তাঁর শক্তি ও যোগ্যতা। ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেবিট ফ্রস্ট তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করছেন, What is your strength or qualification? Bangabandhu replied, I love my people. What is your weakness or disqualification? He replied, I love them too much. বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী, শান্তির পক্ষে, মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত নেতা। এজন্য বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাঁকে ‘জুলিও কুড়ি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে। Asian Peace and Security Conference উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ঢাকায় ১৯৭৩ সালের ২২ ও ২৩ মে দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলনের আয়োজন করে। উক্ত সম্মেলনের শেষের দিন ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুর হাতে পদক তুলে দিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’ এ বিশ্বনেতার প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize in the Field of Creative Economy’নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়।
সাহস ও ব্যক্তিত্বে বঙ্গবন্ধু ছিলেন হিমালয় পর্বতসম। এ প্রেক্ষাপটে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিডেল কাস্ট্রো বলেন, I haven’t seen Himalayas. But I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage this man is the Himalayas. I have thus had the experience of witnessing the Himalayas. বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ স্বল্প সময়ে তিনি ১২৭টি দেশ ও জাতিসংঘ, আইএম এফ, কমনওয়েলথ, ওআইসির মতো ১০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধুর নাম ছিল বিশ্বজোড়া। বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ বাংলাদেশ নাম বললে চিনত না, কিন্তু শেখ মুজিবের নাম বললে চিনত। তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৫ বছর। এর মধ্যে ১৩ বছর ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। ৫১ বছর বয়সে একটা জাতি রাষ্ট্রের স্রষ্টা হন। এটা কম কথা নয়, এটা একটা বিস্ময়। বহু দেশের বহু রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে তাঁর ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং তিনি ছিলেন তাঁদের বন্ধু। যেমন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিডেল কাস্ট্রো, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদত, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত, যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রমুখ। নেতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ। তাই দেশি-বিদেশি অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, গায়ক তাঁকে নিয়ে কবিতা, ছড়া, গান লিখেছেন। তিনি একজন লেখকও বটে। তাঁর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’,‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইগুলো পড়লে মনে হবে তিনি লেখক হিসেবেও সার্থক।
আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধীর চেয়ে সফল ছিলেন। রাজনীতিতে গান্ধী ‘সত্যাগ্রহ’নীতির স্রষ্টা, যার ভিত্তি অহিংসা ও অসহযোগ। অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে তাঁর জুড়ি নেই। গান্ধীজির আহবানে ১৯২০ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। তিনি এ আন্দোলনকে শহর-বন্দর থেকে গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দেন। কোটি কোটি মানুষকে তিনি তাঁর অসহযোগ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। অসংখ্য নর-নারী, বৃদ্ধ-শিশু, ছাত্র-শিক্ষক, তরুণ-তরুণী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, কৃষক-শ্রমিক, অচ্ছুৎ হিসেবে অবহেলিত জনগোষ্ঠী, কুলি, মজুর, ধোপা, নাপিত সব শ্রেণির মানুষকে গান্ধীজি তাঁর অসহযোগ আন্দোলনে শরিক করতে সমর্থ হন। কিন্তু গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন ভারতের স্বরাজ অর্জনে ব্যর্থ হয়। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। গান্ধীজির ন্যায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলার সকল শ্রেণির মানুষ সাড়া দেন এবং আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নেয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাই মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের চেয়ে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন সফল- এ কথা বলা যায়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর
বাবু/ এনবি