পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার পরিত্যক্ত জমিতে এখন রাশি রাশি সূর্যমুখীর হাসি। ত্রিশ হাজার টাকা ব্যায়ে লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন শিক্ষিত যুবক সুমন। তার এই হাসি স্বপ্ন দেখাচ্ছে ওই গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের। এক বছর পূর্বেও যে জমিটুকু পড়ে থাকত অনাবাদি অবস্থায়। আজ সেই জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে অপেক্ষা করছেন নতুন দিনের।
উপজেলা সদর থেকে কিছুটা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলে জলাবাড়ি ইউনিয়নের নাপিতখালি ব্রীজের সাথেই রাস্তার পাশে জমিতে চাষ হয়েছে এই সূর্যমুখীর। গ্রামের দুই শিক্ষিত যুবক দুই ভাই চাষ করেছেন এই সূর্যমুখীর বাগান।
গ্রামের শিক্ষিত দুই ভাই শামিম এবং সুমন নিজস্ব ত্রিশ শতক জমিতে আবাদ করেছেন সূর্যমুখীর চাষ। এ বছর প্রথমবারের মত ওই জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে সাড়া ফেলেছেন অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও। এখন প্রতিদিনই তাদের কেউ না কেউ তাদের কাছে এসে জানতে চাচ্ছেন চাষের পদ্ধতি ও লাভের পরিমাণ। তারা মাত্র ত্রিশ শতক জমিতে মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে এখন স্বপ্ন দেখছেন লাখ টাকার।
চাষী শামিম আহমেদ বলেন, তিনি এইচ,এস,সি পর্যন্ত পড়াশুনা করে অনেক চাকরি খুঁজেছেন। একসময়, চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকে পড়েন কৃষি কাজে। কৃষি অফিস থেকে আমাকে পরামর্শ দেয়া হল সূর্যমুখী চাষের। অফিস থেকে বীজ ও সার পেয়ে শুরু করলাম সূর্যমুখীর চাষ। এজন্য প্রথমে কয়েকবার জমি চাষ দিয়ে তার আগাছা পরিস্কার করে বীজ বপন করি। বীজ বপন করে তাতে সেচ দিলে কিছু দিনের মধ্যই অঙ্কুরিত হয় বীজ। মাত্র তিন মাসে গাছ বড় হয়ে তাতে এখন ধরেছে ফুল। ফুলে এখন ধরেছে বীজ। কিছু দিনের মধ্য সেই বীজ থেকে আসবে তাদের আশি থেকে লাখ টাকা।
কৃষক শামিম বলেন, মাত্র ত্রিশ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষে তাদর ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ত্রিশ হাজার টাকা খরচে ফলিত সূর্যমুখীর বীজ থেকে তারা চার থেকে পাঁচ মণ তেলের আশা করছেন। এই পাঁচ মন তেল থেকে তারা আশি থেকে এক লাখ টাকা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
সূর্যমুখীর চাষ করে যেমন লাভের আশা দেখছেন দুই ভাই। এর পাশাপাশি সূর্যমুখীর বাগান দেখতেও দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। প্রতিদিন স্কুল কলেজ এর ছাত্র ছাত্রী সহ অনেক লোকের সমাগম হয় এই সূর্যমুখীর বাগান দেখতে। সূর্যমুখীর বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক পাহাড়া বসাতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, উপজেলার এ অঞ্চলে সাধারণত পেয়ারা, আমড়া, লেবু, মালটা চাষে সুনাম রয়েছে। তবে সূর্যমুখী চাষে তেমন একটা কেউ আগ্রহ দেখাতে চাচ্ছেনা। আমাদের দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটাতে এবং অনাবাদি জমি ফেলে না রাখার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের হাইব্রীড জাতের সূর্যমুখী চাষে নানাভাবে সহায়তা করে থাকি। তরুণ কৃষক শামিম সাহস করে এই নতুন ফসল চাষে যা করেছে তা সবার মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে। শামিমের দেখাদেখি অনেকে সূর্যমুখী চাষে এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায়,আশি হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।
বাবু/ এনবি