সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫ ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫
বাড়িতে শোকের মাতম
পরিবারের সুখের জন্য সুধে টাকা নিয়ে সৌদিতে গিয়েছিলেন রৌফ মিয়া
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩, ৩:৪৬ PM
গত ২৭ মার্চ সৌদি আরবে ওমরাহ হজের যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়। নিহতের মধ্যে ১৮ জনই বাংলাদেশি। এরমধ্যে নিহত রুক্কু মিয়া ওরফে মো. রৌফ মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কাইয়ুমপুর ইউপির ওমরপুর গ্রামে। তার নিহতের খবরে রৌফ মিয়ার বাড়িতে শোকের মাতম। তার পরিবারের দাবি, লাশ যেন দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।

জানা যায়, পেশায় রিকশা চালক মো. রৌফ মিয়া। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। একমাত্র কন্যা শিউলি আক্তারকে ইতিমধ্যে বিয়েও দিয়েছেন। বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৬) বাবার সাথে সংসারে হাত বাড়িয়ে দিতে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চালাতেন এবং সবার ছোট ছেলে হৃদয় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

বড় ছেলে ও নিজে রিকশা চালিয়েও পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিল রৌফ মিয়ার। পরিকল্পনা করেন বিদেশে পাড়ি জমানোর, এই জন্য প্রয়োজন ৭ লাখ টাকার। স্থানীয় এনজিও থেকে ধার দেনা ও সুদে টাকা যোগাড় করে, গত ৩ বছর আগে রিকশা চালক রৌফ মিয়া সৌদি আরবে পাড়ি দেন। সৌদি আরবের দাম্মাম এলাকায় রেষ্টুরেন্টে সামান্য বেতনে পরিছন্ন কর্মীর কাজ করতেন তিনি। তিন বছর যাবৎ প্রবাসে থাকলেও এখনো শেষ হয়নি ঋণের বোঝা। তাই যাওয়ার পর আর দেশে আসেননি তিনি।

গত ২৭ মার্চ বিকেলে ওমরাহ হজ্ব করার উদ্দেশে যাত্রীবাহী বাসে মক্কা যাচ্ছিলেন রৌফ মিয়া। পথিমধ্যে একটি সেতুতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। যাত্রীবাহী বাসটির ব্রেক কাজ না করায় আশির প্রদেশ ও আবহা শহরের সংযোগ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে এতে বাসটিতে আগুন ধরে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার রুক্কু মিয়া ওরফে মো. রৌফ মিয়া ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। সেখানকার এক স্বজনের মাধ্যমে তার পরিবার মৃত্যুর কথা জানতে পারেন। একদিকে প্রবাসে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যু অপরদিকে মাথার উপর ঋণের বোঝা। এসব চিন্তায় যেন চোখের পানিও শুকিয়ে গিয়ে একপ্রকার বাকরুদ্ধ পরিবারের মানুষগুলোর।

নিহতের স্ত্রী মাসুমা বেগম জানায়, পরিবারের সুখের জন্য সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন আমার স্বামী। বিদেশ যাওয়ার সময় যে ঋণ হয়েছিল তার সামান্য শোধ হয়েছে। সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেছে। কিভাবে এই ঋণ শোধ করবো এবং কিভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাঁচবো! এখন আমার স্বামীর মরদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।

মেয়ে শিউলি আক্তার বলেন, আব্বু ওমরাহতে রওয়ানা হওয়ার ১০মিনিট আগে ফোনে কথা হয়েছিল। এরপর থেকে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। এখন একটাই দাবি, তার লাশটি যেন দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়। এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল এহসান খান জানান, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কসবা উপজেলার রুকু মিয়া নামের এক প্রবাসীর নিহতের খবরটি শুনেছি। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তার লাশটি দেশে আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:   রৌফ   মিয়া  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত