রবিবার ২২ জুন ২০২৫ ৮ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ২২ জুন ২০২৫
আফতাবনগর
গোধূলির আবিরে রাঙা প্রান্তর
সৈয়দ মুহাম্মদ আজম
প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩, ৭:৩৭ PM
সোডিয়ামের আলোয় বিলাসিতার জোৎস্না মাখে দুরন্ত নগরী। বিজ্ঞ-জাদুকর কালো স্কার্ফ দিয়ে মুড়িয়ে দেয় আর যান্ত্রিক মানবেরা নীলিমায় তাকিয়ে বিষণ্ণতা উড়ায়। চশমার ফ্রেমে ঝির ঝির করে হা পিত্যেশ করা স্বপ্ন। জীবনের স্রোত আর কর্মচঞ্চলতা প্রতিনিয়ত তলিয়ে নিচ্ছিল ব্যস্ততার অন্দরে। দূষিত বায়ু যেন শ্বসনতন্ত্রে বিদ্রোহের দামামা বাজিয়ে কণ্ঠরোধে ক্রমাগত আগ্রাসী হচ্ছে। তৃষ্ণিত হৃদয় একটু প্রশান্তির আশায় কাতরাচ্ছে, এই বুঝি বুক চিরে বেড়িয়ে হুঙ্কার দিবে।

মুখিয়ে ছিলাম প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের। অবশেষে যান্ত্রিকতার ভিড় ঠেলে ছুটে গেলাম প্রশস্ত প্রান্তরে, আফতাবনগর। বিকেল চারটা ছুঁইছুঁই। তড়িঘড়ি করে অফিস থেকে বের হয়ে সাবেক সহকর্মী ও বন্ধুবর মাহাকে কল দিলাম। মালিবাগে একত্র হয়ে খোশগল্প করতে করতে এগিয়ে গেলাম মৌচাক মোড়ে। রমজান পরিবহনের বাসে করে রামপুরা ব্রিজে গিয়ে নামলাম। জ্যামে ক্লান্তি দূর করতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম যেখানে যাচ্ছি কাঙ্খিত তেমন কিছুর দেখা পাবো কিনা। চায়ের দাম মিটিয়ে সংশয় নিয়ে রিকশায় উঠলাম।

রিকশা চলছে, হাইড্রোলিক হর্ণের শহর ছেড়ে ফাল্গুনি বাতাসের প্রান্তে। জহুরুল ইসলাম সিটির তরণ পেরোতেই দেখা মিললো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষার্থীরা সেদিনের মতো ক্লাশ শেষ করে দলবদ্ধ হয়ে বের হচ্ছে। সামনে এগোতেই ইট-কংক্রিটের উঁচু উঁচু ভবনের সংখ্যা কমতে শুরু করলো, সেইসাথে কমতে লাগলো কান ঝালাপালা করা বিরক্তিকর যান্ত্রিক শব্দ। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত স্থানে।

বিশাল খোলা প্রান্তর, দুপাশে গাছের সারি ঘেরা প্রশস্ত রাস্তা। শো শো শব্দে ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। মনে হচ্ছে দূর থেকে আমাদের দিকে খুব করে তেড়ে আসছে। এই শহরের সকল বাতাস বুঝি এখানেই এসে জটলা বেঁধেছে। আর তাদের সাথে আঁতাত করতেই বুঝি আমাদের ছুটে আসা। এখন কাশফুলের সময় না হওয়ায় প্রকৃতির সেই মোহনীয় রূপের দেখা পেলাম না। সাথে পাখিদের উপস্থিতিও অনেকটা কম। এ কারণে মনটা ক্ষণিকের জন্য খারাপ হলেও আনন্দের ফোয়ারা শুরু হয় পরক্ষণেই।

খোলা ধূ ধূ প্রান্তরে পা রাখতেই শিরদাঁড়া দিয়ে প্রশান্তির শীতল বাতাস বয়ে গেলো। সামনে এগোতেই বিশাল বালুর মাঠের দেখা পেতেই হনহনিয়ে চলে গেলাম। আফতাবনগরের শেষ প্রান্তে এই বিশাল বালুর চরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিলাম। স্বস্তির বাতাসে ক্লান্তির মাখামাখিতে ভিজিয়ে নিলাম মনপুর। শৈশব-কৈশোরের দেখা স্বপ্নরাজ্যে পাড়ি জমালাম অজান্তেই। মনে পড়লো আত্রাই নদীর পাড়ে বসে কাটানো সময়ের কথা। এই তো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে চিরচেনা আত্রাইয়ের গন্ধ।

ঢাকার বুকে গ্রামীণ খোলামেলা পরিবেশ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যদিও এখন কিছু বিক্ষিপ্ত অট্টালিকার মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। শরৎকালে আফতাবনগর কাশফুলে ভরে যায়। পাখিদের কলকাকলিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগে ভিড় জমান প্রকৃতিপ্রেমিরা। তবে একাকি সময় কাটানোর জন্য রয়েছে অবারিত নীরবতা। মৃদুলা বাতাস, পাখিদের কলরব, মাথার উপর মুক্ত আকাশ আর বিশাল প্রান্তর; ঋতু ভেদে প্রকৃতির নানারকম রূপ ও রং মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। 

পিচঢালা পথ শেষে গ্রামীণ মেঠোপথে দেখা, চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠলো শৈশবের দস্যিপনা। দিগ্বিদিক ভুলে দিলাম ভোঁ দৌঁড়। ইচ্ছে হলো একটু উঁচু থেকে প্রকৃতির রূপ অবলোকন করা। যেই ভাবা সেই কাজ, উঠে বসলাম নাম না জানা গাছে। কতক্ষণ গাছে কেটেছে খেয়াল নেই মাহার ডাকে হুঁশ ফেরে আমার। ওদিকে গোধূলির আবিরে রাঙা লাল সূর্যটা অস্ত যাওয়ার পথে। অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। নিবিষ্ট চোখে নদীর তীরের সূর্যাস্তের এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।

প্রশান্তির ঢেঁকুর তুলে সবুজ রঙা প্রেমিকার সঙ্গে ভালোবাসা হয়। কিন্তু দু’চোখের তৃষ্ণা যেন মেটে না। দেখতে দেখতে সন্ধ্যার নরম অন্ধকার চারপাশ ঘিরে মিছিল জমিয়েছে। এবার ফেরার পালা। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম আফতাবনগরের বটতলায়। চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই চারপাশ থেকে ভেসে আসছে সুমধুর মাগরিবের আজান। সুদীর্ঘ রাস্তায় স্ব-শব্দে রিকশা চলছে, আঁধারের বুক চিরে নগরীর ঘিঞ্জি পরিবেশে ফিরছি। কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.....’। এ যেন স্বর্গ থেকে ভেসে আসা শ্বাশত সুন্দর সুর।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:   রাঙা   প্রান্তর  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত