রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ধানখেতে পানি না পেয়ে আবারও এক আদিবাসী কৃষকের বিষপানের ঘটনা ঘটেছে। একাধিকবার জমিতে সেচের জন্য পানি চেয়েও না পেয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বিষপানের পর গুরুতর অবস্থায় তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে ওই কৃষকের খোঁজ নিতে যান জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। বিষপান করা ওই কৃষকের নাম মুকুল সরেন (৩৫)। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামের গোপাল সরেনের ছেলে।
গত বছরের ২৩ মার্চ পানি না পেয়ে রাগে ও ক্ষোভে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘটু গ্রামের দুই আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি। পরে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। পরে রাজশাহীসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয় তাদের মৃত্যু নিয়ে। ওই দুই আদিবাসী কৃষক বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন। এক বছর আগের সেই রেশ না কাটতেই আবারও পার্শ্ববর্তী গ্রামের কৃষক মুকুল সরেন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন।
চিকিৎসাধীন মুকুল সরেন জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে ঘুরছিলেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাকে কোনোভাবেই পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবারও পানি চাইতে যান। তখন বাবু পানি না দিয়ে এক বোতল বিষ দেন এবং তার জমিতে দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনিই এই বিষ পান করবেন। তারপরও জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি বিষ পান করেন।
মুকুলের বাবা গোপাল সরেনের দাবি, বোরো খেতে পানির জন্য বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর হাসেম আলীর কাছে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরছিলেন তার ছেলে মুকুল। কিন্তু তাকে পানি দেওয়া হয়নি। এরপর রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে খবর পান, বিষপান করে তার ছেলে রাস্তায় পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, রোববার দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন বলে শুনছি। তারপর আসলেই বিষ পান করেছেন কী না, তা জানি না।
বিএমডিএর ওই গভীর নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, এই নলকূপের অধীনে থাকা অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক প্রায় সময়ই দেশীয় মদ পান করে থাকেন। আর মদ পান করে জমিতে সেচ দিতে আসেন। তবে মদ্যপ অবস্থায় পানি দিতে গেলে অনেক সময় পড়ে যান। আর পড়ে মারা গেলে এর দায়ও তাদের ওপর গিয়ে পড়বে। এজন্য নলকূপ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল মদ্যপ অবস্থায় কোনো কৃষক পানির জন্য গেলে তাকে পানি দেওয়া হবে না।
আর মুকুল মদপান করে আসার কারণে দুই দিন তাকে পানি দেওয়া হয়নি। এরমধ্যে কয়েক দিন আগে বৃষ্টিও হয়। তাই অন্য কেউও পানি নিতে যাননি। খরা বাড়ায় সবাই একসঙ্গে পানির জন্য চাপ দেন। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন কোনো কারণে মুকুল বিষপান করেছেন কিনা সেই বিষয়টি তার জানা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ মুকুল সরেনকে দেখতে গিয়ে তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় জেলা প্রশাসন বহন করবে বলে ঘোষণা দেন। এছাড়াও মুকুল শারীরিকভাবে সুস্থ থাকায় মঙ্গলবারই জেলা প্রশাসক তাকে অফিসে ডেকেছেন। সেখানে সমস্যার কথা শুনে সমাধান করে দেওয়া হবে বলেও মুকুলকে আশ্বাস দেন ডিসি।
বাবু/জেএম