রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫ ২২ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫
মাথায় রোদের তাপ, চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ
‘ঈদ করব কীভাবে? ঈদ তো তাদের, যারা বড়লোক
জাহিদ হাসান মাহা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩, ৪:৫৬ PM আপডেট: ১১.০৪.২০২৩ ৫:২৬ PM
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। আর এই ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ধনী দরিদ্র সবাই যার যার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ছোট বড় ধনী দরিদ্র সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ঈদের কেনা কাটায়। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর সর্বত্রই জমে উঠেছে কেনাকাটা। 

সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ধনীদের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের লোকজনরাও চায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এই ঈদে আনন্দ উপভোগ করতে। শত কষ্টের মাঝেও তারা চায় ঘরে ভাল খাবার খেতে, নতুন পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়ানোসহ আনন্দ উপভোগ করতে। ক্রেতাদের ভিড়ে নিউমার্কেটে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ভেতরে শুধু নয়, বাইরের ফুটপাতেও জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা। পথের কোথাও কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। সবকিছুই স্বাভাবিক চলছে।
পছন্দের কাপড় কিনতে ছুটছেন ক্রেতারা

পছন্দের কাপড় কিনতে ছুটছেন ক্রেতারা

 
দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন এসেছে। দৈনন্দিন বাজার নিয়ে কড়ায়-গন্ডায় হিসেব করে অগ্রসর হতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের। এরপরও আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই। দৈনন্দিন বাজার খরচের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন অসংখ্য স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় নিদারুণ অসহায় অবস্থায় অনেকেই দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে নতুন কাপড় পাওয়ার আশায় বসে বসে অপেক্ষা করেছেন। এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা আশায় আছেন— হয়তো কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।

রাজধানীর সাতরাস্তার মোড়ে দেখা হয় এক বৃদ্ধ রিকশা চালকের সাথে, বযস ৬৫ ছুঁই- ছুঁই। তীব্র রোদের মাঝে জ্যামে আটকে আছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে হতাশা যেন ততই বাড়ছে। তার চোখ-মুখে দেখা যাচ্ছে হতাশার ছাপ। কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে, ঈদে কী কিনছেন? ঈদের বাজার কার হলো? সে বলে উঠলো ঈদ আমাদের জন্য না! গরিবেরে আবার কীসের ঈদ। সকাল থেকে রাস্তায় এসে ২০০ টাকাও ভাড়া মারতে পারি না কী করে চলবো। ছেলে মেয়েদের জন্য তো কিছু কেনা কাটার প্রয়োজন তাও করতে পারিনি। কী করবো? তীব্র রোদের ভিতরে আর কতো? জানি না ছেলে মেয়েদেরকে নতুনা জামা কাপড় কিনে দিতে পারি কী না।

রাজধানীর মালিবাগে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় রিকশাচালক আবুল হোসেনের। তিনি বলেন, ‘বাংলা মটর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। গ্রামের বাড়ি সিলেটে। বাবা-মা নেই। স্ত্রী ৩ সন্তান নিয়ে ঢাকায় ঈদ করব। তিনি আরও জানান, রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয় তার। এই আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।
ভাড়া না পেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন রিকশা চালকরা

ভাড়া না পেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন রিকশা চালকরা


ওই রিকশাচালক বলেন, ‘ঈদ করব কিভাবে? ঈদ তো তাদের, যারা বড়লোক। আমাদের তো বেঁচে থাকাই কঠিন। সংসারের খরচ চালাতেই জীবন শেষ।’ তিনি বলেন, ‘নিজের এবং স্ত্রীর জন্য এখনো কিছু কিনতে পারিনি। আমরা কিছুই নেবো না। ঈদ তো ছেলেমেয়েদের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই রাস্তায় কাটে আমার। শরীর ঘামে ভেজে, রোদে শুকায়। আমার আবার কীসের ঈদ? ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় দিতে পারলেই আমি খুশি। ওদের খুশিই আমার ঈদ।’

পান সিগারেট বিক্রেতা মো. জামাল জানান, রোজা আসায় এমনিতেই ব্যবসা খারাপ। কারণ দিনে খুব একটা পান-সিগারেট বিক্রি তেমন বিক্রি হয় না। সব মিলিয়ে কষ্টে থাকলে মার জন্য একটা শাড়ি দোকানে দেখে এসেছেন। বাড়ি যাওয়ার সময় কেনা হবে বলে সে জানায়। ঈদে সাধ আর সাধ্যের টানা পূরণের হিসাব কষছেন রিকশা চালক হোসেন মিয়া। বিপদ আপদের জন্য দৈনিক কিছু না কিছু টাকা জমিয়ে রাখায় এই ঈদে সে টাকা দিয়ে ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জন্য ফুটপাত থেকে জামা কেনেন তিনি। তাছাড়া ঈদের একদিন আগে সেমাই, চিনি কেনা হবে বলে জানায়। 

এদিকে ঈদ পোশাক আর সেমাই কিনতে দুশ্চিন্তায় আছেন রিপন মিয়া। হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই । ঈদে ছেলে মেয়েরা নতুন জামা কাপড় ও সেমাই খেতে পারবে তো এ চিন্তাতেই তিনি অস্থির হয়ে আছেন। তবে চান রাতে আর যাই হওক ছেলের জন্য শার্ট কিনতে চান তিনি। নিম্ম ও মধ্যবিত্ত জীবনে সাধও সাধ্যের মধ্যে ব্যবধান গুছানো খুবই দু:সাধ্য। তবুও তারা সাধ্যের মধ্যে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ছুটছেন। 

অপরদিকে ঈদের বাকি আর মাত্র ১১ থেকে ১২ দিন । এরই মধ্যে বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। বিপণিগুলোতে বাড়ছে ভিড়। তৈরি পোশাক কেনার পাশাপাশি নতুন পোশাক বানাতে আগেভাগেই পছন্দের কাপড় কিনছেন তরুণ-তরুণীরা।
ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর সর্বত্রই জমে উঠেছে কেনাকাটা

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর সর্বত্রই জমে উঠেছে কেনাকাটা


নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো অন্যরকম চিত্র, পছন্দের কাপড় কিনতে ক্রেতারা ছুটছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। কিনে নিচ্ছেন পছন্দের কাপড়টি। এর মধ্যে বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার কারণে নিউ মার্কেটে মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদ কেনাকাটা আগের তুলনায় বেড়েছে বলেও জানালেন বিক্রয়কর্মীরা। গরম এবং ভিড়ের কারণে অনেকেরই পছন্দের জায়গা শপিংমল। ঈদে পুরুষদের ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাবি। যারা দরজি দিয়ে বানাতে চান তারা এখন থেকেই কিনছেন পছন্দের কাপড়। ঈদের আনন্দে সব কিছু পেরিয়ে পছন্দের জিনিসের দিকে নজর ক্রেতাদের।

আজ রাজধানীর, মৌচাক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পছন্দ ও দরদামে মিলে গেলেই কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। তবে দেশে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা ঈদ বাজারে এসে একটু চিন্তা ভাবনা করেই কেনাকাটা করছেন। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে কেনাবেচা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। এখন থেকেই মার্কেটে পোশাকসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। ঈদ সামনে এলে আরও দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই আগেভাগে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। এ ছাড়াও ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে যাওয়ায় ঢাকার অন্যান্য মার্কেটে মানুষের ঢল নেমেছে। এমনকি ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদ বাজারে প্রতিদিন বাহারি ডিজাইনের পোশাক আসছে। ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে দেশি-বিদেশি নতুন নতুন পোশাক। বিক্রেতারা বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এ বছর পাঞ্জাবি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আসা করছি ঈদ ঘনিয়ে আসলে বিক্রি আরও বাড়বে।
পছন্দের কাপড় কিনতে ক্রেতারা ছুটছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে

পছন্দের কাপড় কিনতে ক্রেতারা ছুটছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে


বছরের প্রধান উৎসাহ মাহে রমজানের শেষে আনন্দের ঈদকে বরণ করার জন্য ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে কারোরই আগ্রহ উৎসাহের কমতি থাকে না। স্বল্প আয়ের লোকদের মনে থাকে নানা দুশ্চিন্তা। তারপরও ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে চেষ্টার ত্রুটি নেই। তারা সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করছেন পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাতে। 

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত