শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস এখন বাকসন্ত্রাসে রূপলাভ
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
প্রকাশ: বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩, ৩:২৮ PM

বিগত বছরে বিএনপি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি প্রদানসহ সবধরনের গণতান্ত্রিক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি কর্মসূচি চলাকালীন কিংবা কর্মসূচি-পূর্ববর্তী উল্লেখযোগ্য কোনো বাধা প্রদানের ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ঘটেনি। কিন্তু সেসকল রাজনৈতিক কর্মসুচিতে জনগণের সাড়া পেতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। পূর্বে সকল জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। বিগত বছরে সমাবেশের নামে যে অরাজকতা সৃষ্টি করতে বিএনপি ষড়যন্ত্র করেছিল তা জনগণের সাড়া না পেয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। সামপ্রতিক সময়ে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস এখন বাকসন্ত্রাসে রূপলাভ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিনষ্ট করা এবং বর্তমান স্থিতিশীলতাকে ধ্বংসের নানাবিধ অপ্রচলিত ও অনাকাক্সিক্ষত ব্যবস্থা সরকারের সামনে নিয়ে এসে দেশ ও জাতিকে বিব্রত করাই হচ্ছে  বিরোধী দল বিএনপির একমাত্র উদ্দেশ্য। পূর্বে দলটি অগ্নিসন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকলে বর্তমানে সেটি রূপ নিয়েছে বাক সন্ত্রাসীতে।

জাতীয় নির্বাচন কে সামনে রেখে বিএনপি নানা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম করছে। ইসি থেকে দলটি সংলাপে আহ্বান করা হলে সেটিতে দলটির সাড়া না দেওয়া ষড়যন্ত্রের অংশ। বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপি বরাবরের মতোই রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য কূটকৌশলের অংশ, কুৎসিত অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। অথচ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময়ে কারো সাথে আলাপ না করে ইসি গঠন করেছে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বিএনপি লক্ষ্য ছিল দেশে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন না হোক। তারা চেয়েছিল আজিজ মার্কা কমিশন হোক। তাদের লক্ষ্য ছিল ইসি গঠন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। বলা যায় শুধু দেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই বিএনপি সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে না। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের কাছে সরকারপ্রধান হওয়ার কেউ নেই। এ  কারণেই বিএনপি যেভাবে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে তারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, তারা একটি এক-এগারো আনতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ এখন আর সেই অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করবে না।

বিএনপির প্রবাসী নেতা দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রায়ই বলছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। প্রশ্ন হল, কার কাছ থেকে বাংলাদেশ ফেরত চান? কোন বাংলাদেশ ফেরত চান? ২০০১-২০০৬ দেশে যে অপশাসন দুনীতি হয়েছে বিএনপি আবার সেসময়ে ফিরে যেতে চায়। খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ডেনমার্ক ২৫০ কোটি টাকার সাহায্য প্রত্যাহার করেছে। এডিবি বন প্রকল্পে সহায়তা বাতিল করেছে। সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই সময় জঙ্গিবাদের উল্লম্ফন উত্থান হয়েছে। ৬৩ জেলায় জঙ্গিরা একযোগে বোমা হামলা করেছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জঙ্গি ও রাষ্ট্রযন্ত্র মিলে আওয়ামী লীগের জনসভায় সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে গেলেও ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। বেগম জিয়ার শাসনামলে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা শুরু করে। অন্ততপক্ষে ১০টি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয় তিন মাসের ব্যবধানে। এতে বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক কর্মী, পথচারীসহ ৩০ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হয়। এসব ঘটনা সাক্ষ্য দিচ্ছে, বিএনপি যে বাংলাদেশে ফেরত যেতে চায়, তা আলোকিত বাংলাদেশ নয়। তার মানে আলো থেকে অন্ধকারে ফেরার মিশন টেক ব্যাক বাংলাদেশ।

দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের এবং কয়েক লাখ কন্যা-জায়া-জননীর চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। নজিরবিহীন চড়া দামে অর্জিত স্বাধীনতা নিয়ে বিএনপির আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ভয়ংকর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ‘বাই চান্স’ বা ‘ভাগ্যক্রমে’ হয়েছে। তাই দেশের সংবিধানও অপরিকল্পিত। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি সেই সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনগণের তোয়াক্কা না করে যারা কোনো কোনো সামরিক কর্মকর্তার পকেট থেকে জন্ম নেওয়া দলের ‘বাই চান্স’ নেতা হয়ে গেছেন, একমাত্র তাদের পক্ষেই দেশের স্বাধীনতা-সংবিধান নিয়ে এমন ধরনের অর্বাচীন-বাস্তবতা বিবর্জিত মন্তব্য করা সম্ভব।

দেশের চরমপন্থি মনোভাব সম্পন্ন রাজনৈতিক দল  কিংবা অরাজনৈতিক বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন করা থেকে শুরু করে দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীতে জনবিচ্ছিন্ন ও অনভিপ্রেত ভূমিকা বিএনপির রাজনীতিকে জনগণের নিকট হতে ঢের দূরে সরিয়ে দিয়েছে।  রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচার এবং বর্তমান  সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপপ্রচার বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ বলে জনগণের অভিমত। ‘ব্লেইম গেম’ বিএনপির একটি পুরনো রাজনৈতিক চরিত্র। বিএনপি দেশের যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ কিংবা সংকটেও সরকারকে অহেতুক দোষারোপ এর চেষ্টা করে। এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল গতবছর ( ২০২২ সাল)  সিলেট অঞ্চলে হয়ে নজিরবিহীন বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বিএনপি সরকারকে দোষারোপ করেছে। যা কেবল একটি নির্বোধ রাজনৈতিক দল ও তার নির্বোধ রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব। এ বিষয়গুলো বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে ভাঁড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে।

রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই রাজনীতির মাঠে অবস্থান করতে হবে এবং জনগণকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে হবে। এই বিষয়টি বিএনপি একেবারেই ভুলে গেছে। তারা শুধুমাত্র মনে করছে যেকোনো একটি শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে যা সত্যিই দিবাস্বপ্ন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণে সাংগঠনিকভাবে দলটি একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেকদিন নির্বাচনের বাইরে থাকার ফলে তাদের অনুসারীদের মধ্যে দল সম্পর্কে এবং নির্বাচন সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিয়েছে। বিএনপির এই নেতিবাচক অবস্থান প্রকৃতপক্ষে  তাদের জন্য কোন ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না। তাছাড়া গত ১৪ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিএনপির এই জাতীয় নেতিবাচক রাজনীতিকে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত