শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
নিরাপদ হোক রেলপথ
জহুরুল ইসলাম
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩, ৪:২৯ PM

এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাচলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ মাধ্যম ট্রেন। দূরপাল্লার গণপরিবহন হিসেবে যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে রয়েছে ট্রেন। কম সময়ে এবং অল্প খরচে অনেক দূরের গন্তব্যে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করা যায়। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মনোরম বাতাস জুড়িয়ে দেয় প্রাণ। এখানে নেই জ্যামের যানজট, সড়ক পরিবহনের মতো অতিরিক্ত দুর্ঘটনা আর নদীপথের মতো দূষিত পানির দুর্গন্ধ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন প্রায় ৪৫ থেকে ৫০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। চলন্ত ট্রেনে ‘পাথর নিক্ষেপ’ যাত্রীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরে হতাহত হচ্ছেন গার্ড, চালক ও যাত্রীরা। ছোট ছেলেমেয়েরা খেলার বশে অনেক সময় চলন্ত ট্রেনে পাথর, ঢিল ইত্যাদি নিক্ষেপ করে থাকে। তাদের এই শখের খেলার কারণে প্রায়ই অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তাদের বিভ্রান্ত বিকৃত আনন্দ রেলযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে। নিরাপদ বাহনকে অনিরাপদ করে তুলছে। পরিণতিতে ট্রেনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবনও বিপন্ন হচ্ছে। পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ট্রেনের যাত্রী আহত ও নিহতের ঘটনা ছাড়াও পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় বেশির ভাগ মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের হাত রয়েছে। রেলওয়ের একশ্রেণির অসৎ কর্মকর্তাদের সহায়তায় ট্রেন স্টেশনে ঢোকার আগে বা স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর ট্রেনের গতি কমিয়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্রেন থামিয়ে অবৈধ মালামাল নামানো হয়। এসব ক্ষেত্রে মাদক পাচারকারীরা নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করতে থাকে। কোনো কারণে যদি ট্রেন ওই স্থানে না থামে, তখন তারা পাথর নিক্ষেপ করে। নির্জন স্থানগুলোতেই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি।

রেলওয়ে অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের ২০টি জেলায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৫টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৫টি জেলা। আর গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে ৬৫টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৩৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৯টি। চিহ্নিত স্থানগুলোতে সর্বদা পুলিশি পাহারা বসানো সম্ভব নয়। তাছাড়া রেলওয়েতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বল্পতাও রয়েছে। পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে হলে সর্বপ্রথম মানুষকে সচেতন হতে হবে। পারিবারিক-সামাজিক শিক্ষাই পারে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা রোধ করতে।

কোথায় যাত্রীরা চোর, ছিনতাইকারী আর পাথর নিক্ষেপকারীদের রোষানলে পড়ে যান, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে চলন্ত ট্রেনে যাত্রী রক্তাক্তের ঘটনা ঘটছে। আবার কখনো ঝামেলা বা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ যেসব দুর্বৃত্তের হাতে প্রতিনিয়ত যাত্রী হয়রানি ও রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে তারা বরাবরের মতোই রয়ে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। এছাড়াও, পাথর নিক্ষেপে যন্ত্রাংশের যে ক্ষতি হয়, প্রতি বছর তা সারতে ব্যয় হয় প্রায় ২ কোটি টাকা।

এতো দুর্ঘটনা আর জাতীয় সম্পদ নষ্ট হওয়ার পরেও চলন্ত ট্রেনে বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ তো হয়নি, পাশাপাশি নিক্ষিপ্ত পাথরে আঘাত পাওয়া ট্রেনযাত্রীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থাটুকুও আজ পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি, এমনকি ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো ক্ষতিপূরণও পান না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরণ, চোখে ও মাথায় আঘাত নিয়ে বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয় যাত্রীকে। ফলে বিপদের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। যেহেতু ট্রেনে এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, সেহেতু ট্রেনে প্রাথমিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা প্রয়োজন। ট্রেনে অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে এসব বিধিবিধান, উচিত-অনুচিত আলোচনা-পর্যালোচনা করে এলেও চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কমানো যায়নি। মূলত দায়সারা কিছু প্রচারণা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আইন থাকলেও আইন প্রয়োগের উদাহরণ এখনও প্রায় শূন্যের কোঠায়। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ও রেলপথে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে কঠোর শাস্তিমূলক আইন প্রণয়ন এবং অতি দ্রুত কার্যকর করার পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। জনগণের ইচ্ছাশক্তি এবং প্রশাসনের সহযোগিতার মাধ্যমেই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ থেকে শুরু করে নানা দুর্ঘটনা অনেকাংশে নির্মূল করা সম্ভব। নিরাপদ ভ্রমণ, নিরাপদ যাত্রাপথ আমাদের সবার কাম্য।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত