বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। আইএমএফ প্রধান মনে করেন, শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব কোভিড-১৯ এর পরও বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রেখেছে। সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা কওে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতৃত্ব জরুরি। তিনি বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিকালেও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুসংযোগ স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে আইএমএফ প্রধানকে অবহিত করেন। দেশের উন্নয়ন এক দিনে হয়নি। এটা দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১৫ বছর দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়। যার ফলশ্রুতিতে উন্নয়ন অগ্রগতি চলছে পুরো সুপারসনিক বিমানের গতিতে। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে-বিদেশে মিথ্যা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশনা করে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জঘন্যতম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সকল অপপ্রচার ও অপপ্রচেষ্টায় চোখ না রেখে শেখ হাসিনার চোখ শুধু উন্নয়ন ও দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার স্বপ্নের সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। আর বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। তাই তো বলা যায় যতোদিন রবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার সারা বিশ্বে ‘৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি’ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে । আইএমএফ মনে করেছে যে, করোনা মহামারি চলাকালে এবং মহামারির ভয়াবহতা-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ ভালো করেছে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, মন্দা ও জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে। তাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২.২ শতাংশ সুদে নেওয়া এই ঋণের মোট ৪৭০ কোটি ডলার বাংলাদেশ পাবে সাতটি কিস্তির মাধ্যমে। ২০২৬ সালে পাওয়া যাবে সর্বশেষ কিস্তি। এর মধ্যে ঋণ সহায়তা হিসেবে এক্সটেনডেন্ড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) ও এক্সটেনডেন্ড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় পাবে ৩২০ কোটি ডলার, যা ব্যয় হবে বাজেট সহায়তা বাবদ। পাশাপাশি ১৪০ কোটি ডলার পাবে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায়। যা ব্যয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে। প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের এই নবগঠিত তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলক ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এমনকি চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত ‘আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে। ওই বছরে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে চীন ও ভারতকেও ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। আইএমএফের ‘রিজিয়নাল ইকোনমিক আউটলুক : এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন সংবাদ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৫ শতাংশ, চীনের হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে চীনের চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে দশমিক ৩ শতাংশ। তবে চীনের অর্থনীতি বাংলাদেশের আকারের চেয়ে অনেক বড়। একই সঙ্গে ভারতসহ আরো অনেক দেশের অর্থনীতির আকার বাংলাদেশের চেয়ে বড়। শুধু বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ কিছু দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকছে। চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের দশমিক ৪ শতাংশ কম হচ্ছে। ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তবে অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে কম হচ্ছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ার সাড়ে ৪, মিয়ানমারের ২ দশমিক ৬, নেপালের ৪ দশমিক ৪ ও থাইল্যান্ডের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। শ্রীলংকার কোনো প্রবৃদ্ধি হবে না। দেশটির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে শ্রীলংকা প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে। ওই বছরে তাদের প্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশ হতে পারে। আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানের দিক থেকে দ্বিতীয়। ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষে থাকবে ভিয়েতনাম। ওই বছরে চীন ও ভারতের প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের চেয়ে কম হবে। চীনের হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ভারতের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্য সবদেশের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে কম হবে।
বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক জিডিপিতে এশিয়ার অবদান হবে ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে চীনের এককভাবে ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ, ভারতের ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ, বাংলাদেশের ১ দশমিক ৮ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ইউরোপের ৭ দশমিক ১ শতাংশ, আফ্রিকার ৪ শতাংশ।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর পরে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা দেশের অগ্রগতি ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রোল মডেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরে দেশের মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় যে সূচনা করছেন তা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে ঘুরে দাঁড়ানো শিখিয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধু যখন বিশ্বনেতায় রূপান্তরিত হতে যাচ্ছিলেন তখন দেশবিরোধী চক্র বা অপশক্তি তাঁকে হত্যার মাধ্যমে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মুসতাক ও জিয়ার অপশাসন ও লুটপাটে দেশের অভ্যন্তরে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। তারই ধারাবাহিক নাটক ছিল স্বৈরাচার এরশাদেও স্বৈরশাসনামল। দীর্ঘদিন পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ শুরু হয়। পঁচাত্তরের পর বাঙালির জীবনে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল, তার ফেরার মধ্য দিয়ে তা কেটে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। বাংলার মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখে। ১৯৮১ সালে দেশে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তার কাঁধে পড়ে। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি স্বৈরাচার হটায় এবং ১৯৯১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সরকার গঠন করে। তারা দেশে উন্নয়ন না করে লুট ও দুর্নীতি করে ব্যর্থরাষ্ট্র তৈরি করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দৃশ্যমান উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
দেশের মানুষ যখন বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনে বিপযস্ত তখন তারা ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা দক্ষ নেতৃত্বের কাছে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেন। আর তাতেই পাল্টে যেতে থাকে দেশের সামগ্রিক চিত্র। পরবর্তীতে ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনের কবলে পরে বাংলাদেশ। আর শেখ হাসিনার গৃহীত উন্নয়ন পদক্ষেপে বাধাগ্রস্ত হয়।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিএনপির-জামায়াত জোটের অপকৌশলে দেশে সৃষ্টি হয় ১/১১ সেনাসমর্থিত অগণতান্ত্রিক সরকার। দেশের মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা না থাকায় তারা লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পরে। সেই অপশক্তিকে পরাজিত কওে শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বাংলাদেশ খুঁজে পায় তার স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বারথিÑ যার নাম শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে পায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রগতি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের পরপর ৩ বার আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শাসনের দায়িত্বে যা মাঝি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাহসী উদ্যোগের আংশিক চিত্র হলোÑ নিজেদের অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মাসেতু নির্মাণ। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হাইওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেকন্দ্রসহ অসংখ্য ছোট-বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান।
তিনি শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেই ক্ষান্ত হননি; তিনি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য মানবাধিকার ও সামাজিক অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তার মানবাধিকার অন্যতম দৃষ্টান্ত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও তাদেও আবাসন, একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ণ প্রকল্প, দরিদ্রভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিভাতা, কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান ইত্যাদি। শেখ হাসিনার এ অভুতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাহসী নাম। তাঁর সাহস ও একাগ্রতা উন্নয়নের মূলশক্তি। যেখানে দেখা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ তাদের অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের কারণে তাদের উন্নতির গ্র্যাফ ক্রম নিম্নমুখী সেখানে বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার গ্র্যাফ ক্রম ঊর্ধ্বমুখী। শেখ হাসিনার এ অভূতপূর্ব ও অকল্পনীয় উন্নয়ন বিশ্বমিডিয়াতে প্রশংসিত।
লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
-বাবু/এ.এস